ভেতরে বিভক্তি দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে বড় দু’টি রাজনৈতিক শক্তি হলো বিএনপি ও জামায়াত। তারা উভয়েই বলেছে- জুলাই ও আগস্টে নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা বিচারের মুখোমুখি হোন- এটা তারা চায়। তার ওপর তারা আরও যুক্তি দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগের ভাগ্য কি হবে সে সিদ্ধান্ত নেবেন দেশবাসী। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন যেসব ছাত্ররা তারা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপসহীন অবস্থান নিয়েছেন। ২৫শে জানুয়ারি এক র্যালিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা এবং ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাহফুজ আলম বলেছেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না আওয়ামী লীগকে। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য হলো হত্যাকাণ্ড, গুম ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে আমরা সংস্কার বাস্তবায়ন করবো; নিশ্চিত করবো বাংলাদেশপন্থি সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন।
আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচন হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, তাহলে দলটির পা রাখার জন্য একটি জায়গা সৃষ্টি হবে। তবু নেতৃত্ব, সংগঠন ও তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগের মাধ্যমে জনআস্থা পুনর্গঠন ছাড়া আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবন লাভ করা হবে অত্যন্ত জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রফেসর আলী রীয়াজ আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের কোনো সুযোগের জন্য চারটি শর্ত উদ্ঘাটন করেছেন। তা হলো- ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে যেসব অপরাধ করেছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়, তার জন্য দ্ব্যর্থহীনভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদেরকে বর্তমান আদর্শ পরিত্যাগ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে, শেখ হাসিনার পরিবারের কোনো সদস্য এই দলে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সহ যেসব জঘন্য অপরাধ করেছে তারা- তার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, শেখ হাসিনা সহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় নৃশংসতার জন্য সরাসরি দায়ীদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যখন এসব শর্ত পূরণ হবে, শুধু তখনই তাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয় আলোচনা করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনার পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে গোপনে মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীরা সমালোচনা করলেও এখনো শেখ হাসিনার ওপর আস্থা আছে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর। বিদেশে অবস্থানরত সিনিয়র নেতারা ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টকশো। তার মধ্যদিয়ে তারা নেতাকর্মীদের পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছেন। তাদেরকে বলছেন, ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীদেরকে তা খাওয়ানো কঠিন বিষয়। তারা কমেন্ট সেকশনে এসব দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেতারা এবং দলের জুনিয়র নেতারা এ বক্তব্যকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, বিদেশে অভয়ারণ্যে থেকে নির্বাসিত নেতাদের পক্ষে এসব কথা বলা সহজ। নেতারা এসব কথা বলছেন, যখন সারা বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ের নেতারা বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন অথবা আত্মগোপনে আছেন। খুলনার ওই সাবেক ছাত্রনেতার মতো বহু নেতাকর্মী প্রকাশ্যে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে খুব বেশি ভয় পায়। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন অনেক দূরের পথ।