বন্ধ হচ্ছে কারখানা বাড়ছে বেকার

একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব ও শ্রমিক অসন্তোষ। অসহায় শ্রমিকরা কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে, জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবিলম্বে বন্ধ শিল্পকারখানা চালু করে কর্মসংস্থান বাড়ানো উচিত। কারণ, বিদ্যমান অস্থিরতায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। চালু কারখানাগুলো বন্ধ হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। বেকার শ্রমিকদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সাময়িকভাবে শ্রমিকদের রেশনের ব্যবস্থা করা উচিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক অসন্তোষ, ঋণের উচ্চ সুদহার, কাঁচামাল আমদানির জন্য চাহিদামতো এলসির (ঋণপত্র) অভাব, জ্বালানিসংকট, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাব, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। আবার অনেক উদ্যোক্তা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসব কিছুর জেরে গত এক বছরে ১৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে বেকার হয়েছে ৯৪ হাজার কর্মী। সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬টি পোশাক কারখানার ৩৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্ধ ১৫৫ কারখানায় ১ লাখ ৩৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, এক বছরে সংগঠনটির সদস্যভুক্ত ৭৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে ৫১ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে। বেতন দিতে পারছে না আরও দেড় শতাধিক কারখানা। ৫০টির বেশি কারখানা বন্ধের খবর দিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। এতে বেকার হয়েছে ৩৫ হাজার শ্রমিক। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর ১৪টি বৃহৎ কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় ৮ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছে। এদিকে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানার কর্মচারী ও শ্রমিকরা ২২ জানুয়ারি বিকাল থেকে গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা গ্রামীণ ফেব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশনসের ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাজীপুর মহানগর পুলিশের এক সূত্র জানান, শ্রমিকরা বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ চার-পাঁচটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে। ভাঙচুর করেছে ১৫-২০টি যানবাহনের জানালার কাচ। এদিকে বন্ধ কারখানার বেকার শ্রমিকরা কাজের অভাবে নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক পোশাক কারখানার মালিক জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে একাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় শ্রমিকরা জড়িত।

পুলিশ আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। আটকদের অনেকে বন্ধ পোশাক কারখানার চাকরিচ্যুত শ্রমিক বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শ্রমিক ও নারী অধিকার নেত্রী তাসলিমা আখতার লিমা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা কারখানাগুলোর শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত না করে অন্য জায়গায় কাজের সুযোগ দিতে হবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া এসব কারখানা অবিলম্বে খুলে দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে সরকারের তদারকি করতে হবে। কারখানা বন্ধ করলে শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে দাবিদাওয়া কেন্দ্র যে অসন্তোষ, কর্মবিরতি বা অন্য কোনো কারণে কারখানা বন্ধ হয়েছে সেসব কারখানার শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কর্মহীন।

পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির যখন আয় থাকে না তখন তারা কর্ম খোঁজেন। সঞ্চিত অর্থ থাকলে সেটা দিয়ে আবার ঋণ করে খরচ মেটান। সব উপায় যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে যান। জীবনের এ অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য তারা অপরাধমুখী হন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেকার শ্রমিকদের তালিকা করে তাদের স্বল্পমূল্যে অথবা বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।’ এ বিষয়ে শ্রমসচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বেকার শ্রমিকদের কীভাবে কর্মসংস্থান করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছি। বিজিএমইএসহ অন্যান্য শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ