রণপ্রস্তুতিতে হিজবুল্লাহ

উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত

একদিকে লেবাননের ওপর ইসরায়েলি স্থল, নৌ ও বিমান হামলার উদ্যোগ, পাশাপাশি প্রতিপক্ষ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ প্রস্তুতি, অন্যদিকে ইরানি হুঁশিয়ারির পর উপসাগরে মার্কিন সামরিক শক্তি বাড়ানোর ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী আকাশপথে লেবাননের ওপর হামলা চালিয়ে সপরিবার আরও এক হামাস নেতা এবং বামপন্থি পিইএলপির তিন নেতাকে হত্যা করেছে। একইসঙ্গে তারা ইয়েমেনেও হামলা চালিয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, দুই দিন আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে মার্কিন বোমায় সজ্জিত ইসরায়েলি বিমানবহরের হামলায় প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহর উপপ্রধান নাইম কাসেম জাতির উদ্দেশে গতকাল ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, লেবাননে ইসরায়েলের স্থল আগ্রাসন মোকাবিলায় পুরো প্রস্তুত রয়েছে হিজবুল্লাহ। ‘ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না’ মন্তব্য করে ভিডিও বার্তায় নাইম কাসেম বলেন, ‘আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। ইসরায়েল যদি স্থলপথে আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমরাও প্রস্তুত আছি।’ হিজবুল্লাহর উপপ্রধান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিগগির নতুন নেতা নিয়োগ দেওয়া হবে। নতুন নেতা নির্বাচনের বিষয়টি স্পষ্ট।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। নাইম কাসেম আরও বলেন, ইসরায়েল লেবাননের সর্বত্র হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের ছাপ পড়েনি। তিনি বলেন, ইসরায়েল বেসামরিক লোকজন, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অ্যাম্বুলেন্সের ওপরও হামলা চালাচ্ছে। তার যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়ছে না; বরং হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এ সংঘাতে সীমাহীন সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েলের সহযোগীতে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বক্তব্যের শেষে কাসেম বলেন, ‘আমরা জয়ী হব, ঠিক যেভাবে ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে আমরা জয়ী হয়েছিলাম।’

 রণপ্রস্তুতিতে হিজবুল্লাহ

সেনাশক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত সম্প্রসারণের বিষয়ে সতর্ক করার পর, এবার অঞ্চলটিতে মার্কিন বিমান সহায়তা সক্ষমতা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সেখানে সেনা মোতায়েনের জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে দেশটি। মার্কিন সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে পেন্টাগনের মুখপাত্র মেজর জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, ‘ইরান ও ইরান-সমর্থিত অংশীদার ও সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এ পরিস্থিতি কাজে লাগাতে বা সংঘাতের সম্প্রসারণ করা থেকে বিরত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র বদ্ধপরিকর।’ তিনি সতর্ক করেন, ‘যদি ইরান বা তাদের সমর্থকরা এ সময়টি কাজে লাগিয়ে মার্কিন কর্মী বা এ অঞ্চলের স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করে, তবে আমাদের জনগণকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।’ পেন্টাগনের বিবৃতিতে নতুন বিমান স্থাপনার আকার বা সুযোগসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল, ‘আমরা আগামী দিনে আমাদের প্রতিরক্ষামূলক বিমান সহায়তা ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করব।’ বিবৃতিতে পেন্টাগনের মুখপাত্র বলেছেন, ‘অতিরিক্ত মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের কাজ চলছে। বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে আমরা আমাদের প্রস্তুতি বাড়াচ্ছি।’

 

ইসরায়েলি হামলায় সপরিবার হামাস নেতাসহ পিইএলপির তিন নেতা নিহত : লেবাননে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) হামলায় গতকাল হামাসের স্থানীয় নেতা ফাতাহ শরিফ আবু আল-আইন তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ নিহত হয়েছেন। একই দিন কাছাকাছি সময়ে বৈরুতে নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনের বামপন্থি দল পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিইএলপি) তিন নেতা। ফাতাহ শরিফ আবু আল-আইনের নিহতের সংবাদ এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে হামাস। বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী এ সশস্ত্র গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাসের লেবানন শাখার নেতা ফাতাহ শরিফ আবু আল-আইন দক্ষিণ লেবাননের আল-বাস শিবিরে নিজ ঘরে অবস্থানকালে আগ্রাসনকারী শক্তির বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন। হামলায় তার স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যাও শাহাদাতবরণ করেছেন।’ ফাতাহ শরিফ হামাসের লেবানন শাখার নেতা ছিলেন।

ইয়েমেনে হামলা : লেবাননে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর মধ্যেই এবার ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটিতে থাকা ইরান সমর্থিত আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতির বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে এ হামলা শুরু করেছে দখলদার দেশটি। ইয়েমেনে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইয়েমেনের রাস ইসা ও হুদাইদাহ এলাকায় হুতিদের সামরিক আস্তানা লক্ষ্য করে এ হামলা চালিয়েছে তারা।

ইসরায়েল বলছে, তারা ইয়েমেনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সমুদ্রবন্দরে হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনে হামলার বিষয়ে এক্সে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ফাইটার জেট, রিফুয়েলিং, ইন্টেলিজেন্স প্লেনসহ বিমান বাহিনীর কয়েক ডজন বিমান নিয়ে ইয়েমেনের রাস ইসা ও হুদাইদাহ অঞ্চলে হুতির সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও তেল আমদানিতে ব্যবহৃত একটি সমুদ্রবন্দরেও হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে হামলার কথা স্বীকার করে হুতি নিউজ এজেন্সি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইয়েমেনি সমর্থন ফ্রন্ট থামবে না। ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের হামলা বন্ধ হবে না। এর আগে শুক্রবার ও শনিবার ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল হুতি যোদ্ধারা।

নাসরুল্লাহ হত্যায় মার্কিন বোমা : লেবাননের বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় ইসরায়েল যে বোমা ব্যবহার করেছিল তা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন সিনেটর। এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন সিনেটর মার্ক কেলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি গাইডেড বোমার আঘাতে হিজবুল্লাহপ্রধান নিহত হন। তিনি আরও বলেছেন, নাসরুল্লাহ হত্যায় ইসরায়েল ২ হাজার পাউন্ড (৯০০ কেজি) ওজনের মার্ক ৮৪ সিরিজের বোমা ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাইডেড অস্ত্রের ব্যবহার দেখছি। কারণ এ অস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করে। সাধারণত সরাসরি আক্রমণের জন্য এ ধরনের গাইডেড অস্ত্র ব্যবহৃত হয়।’

সর্বশেষ