প্রকট ডলার সংকট রোজার পণ্য আমদানি ‘বড়দের’ কবজায়
messenger sharing button
whatsapp sharing buttonআন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশের অনুকূলে ছাড় করেছে। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে আইএমএফ থেকে এ অর্থ ছাড় করা হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেছেন, আমরাও দ্রুত ঋণ চেয়েছি। আইএমএফও দ্রুত ছাড় করে দিয়েছে। এই ঋণ পাওয়ার ফলে অন্যান্য সংস্থা থেকেও দ্রুত ঋণ পাওয়া যাবে। ফলে দেশে ডলারের জোগান বাড়বে, সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে।

টাকা

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতে আইএমএফ-এর নির্বাহী বোর্ড বাংলাদেশকে তিনটি খাতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে। মঙ্গলবার রাতের প্রথম প্রহরেই বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে বিবৃতিতে আইএমএফসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরেই আইএমএফ থেকে অফিসিয়ালি প্রেস রিলিজ ইস্যুর মাধ্যমে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। ঋণ অনুমোদনের একদিন পরই বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে জমা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অফিসে এসেই বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর ওইদিনই সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দেনা-পাওনার লেনদেন সম্পন্ন করে রিজার্ভের সঙ্গে যোগ করেছেন। ফলে রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২১৯ কোটি ডলার। আইএমএফের ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বাড়বে। ফলে সংকটও কিছুটা কমবে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকা থেকে ঋণের অর্থও পাওয়া যাবে। আগামী এপ্রিলে এডিবির বোর্ড সভা হবে। ওই সভায় বাংলাদেশের অনুকূলে বড় অঙ্কের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে। তার আগেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক ও জাইকার ঋণও পাওয়া যাবে অচিরেই।

আইএমএফ-এর বোর্ডে কোনো দেশের অনুকূলে ঋণ অনুমোদনের পর সাধারণত ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ছাড় করা হয়। এবার আইএমএফ অনুমোদনের একদিনের মধ্যেই ছাড় করেছে। এর আগে করোনার সময়েও দ্রুত ঋণ ছাড় করেছিল।

বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। এ সংকট কাটাতে অনেক দেশই আইএমএফ-এর কাছে ঋণ চেয়েছে। এ কারণে সংস্থাটি দ্রুত ঋণ ছাড় করেছে। যাতে এই ঋণ দেশগুলোর সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। তবে বাংলাদেশের আইএমএফ-এর ঋণ আলোচনা শুরুর আগে থেকেই শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু এখনো দেশ দুটির অনুকূলে ঋণ ছাড় করা হয়নি। দেশ দুটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপ বলে আইএমএফও ঋণের শর্ত নিয়ে অনেক দরকষাকষি করছে।

সূত্র জানায়, বাকি ৪২২ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার ৬টি কিস্তিতে ছাড় করবে। ছয় মাস পর পর কিস্তি পাওয়া যাবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো ঋণ পাওয়া যাবে।

গত বছরের জুলাইয়ে বৈশ্বিক মন্দার নেতিবচাক প্রভাব মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ আইএমএফ-এর কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চায়। কিন্তু আইএমএফ-এর বোর্ড অনুমোদন করেছে ৪৭০ কোটি ডলার, যা চাওয়ার চেয়ে ২০ কোটি ডলার বেশি।

এই ঋণ পেতে বাংলাদেশকে বেশকিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম একদফায় ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে দুই দফা। বিদ্যুতের দামও পাইকারি ও খুচরায় বাড়ানো হয়েছে দুই দফা। সারের দাম বাড়ানো হয়েছে এক দফা। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

এসব কারণে বিশেষ করে পণ্যমূল্য বেড়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। ঋণ পেতে আরও কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগেই তারা শর্তের বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

সর্বশেষ