চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে স্পেনে অবস্থান করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা এবং তাদের কর্ম পদ্ধতি সরাসরি দেখতে স্পেনে গিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, দু’জন ব্যবসায়ী এবং একজন সরকারি কর্মকর্তা। সেখানে অবস্থানকালে কালের কণ্ঠের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মন্ত্রী।
কালের কণ্ঠ: ৫২৫০০ টন সরকারি গম ভারত থেকে চট্রগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে, বর্তমানে গমের দামের ঊর্ধ্বগতি, কমার সম্ভাবনা আছে কি?
টিপু মুনশি: আমদানিকৃত গম আগেই জাহাজে ছিল।
কালের কণ্ঠ: বর্তমানে প্রায় সকল পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতিতে। কবে নাগাদ কমতে পারে এই দাম?
টিপু মুনশি: ভোজ্য তেলের দাম বৈশ্বিকভাবে বেড়েছে। সেটারই প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপরে। যুদ্ধের জন্য তেলের ওপরে কিছুটা প্রভাব পড়ছে আন্তজার্তিকভাবে। শিগগিরই এই দাম কমে যাবে।
কালের কণ্ঠ: করোনার ধাক্কার পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্ব জুড়ে নতুন দুঃচিন্তা যোগ করলো মাংকিপক্স। এরই মধ্যে ১৪টি দেশে প্রভাব বিস্তার করেছে এটি। এর কোনো প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে পড়ার আশঙ্কা মনে করছেন কি না?
টিপু মুনশি: দেখেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে, বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। তেলের দামটা মূলত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই বেড়েছে। কেননা সয়াবিন তেল মূলত কেনা হয় ব্রাজিল, আর্জেটিনা থেকে। সেখানে আগেই দাম বেড়েছে। যার ফলে আমাদের এখানেও আগে থেকেই তার প্রভাব পড়েছে। আর পাম ওয়েল কেনা হয় ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়া থেকে। সেখানেও দাম বেড়েছে। যার ফলে এর প্রভাবও পড়েছে। মাংকিপক্সের প্রভাব এখনো বাংলাদেশে পড়েনি।
কালের কণ্ঠ: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের বাণিজ্যিকখাতে কতোটা?
টিপু মুনশি: ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি তেলের দামের প্রভাব তেমন বেশি না। শুধুমাত্র সূর্যমুখী তেলটা ইউক্রেন থেকে আসে। বাংলাদেশের মানুষ বেশি ব্যবহার করে সয়াবিন তেল ও পাম ওয়েল। ব্রাজিল, আর্জেটিনা ও ল্যাটিন আমেরিকা থেকে আসে সয়াবিন তেল এবং পামওয়েল আসে ইন্দোনেশিয়া ও মালোয়শিয়া থেকে। তারা তেলের দাম কমালে, আমাদের স্বাভাবিকভাবেই তেলের দাম কমে যাবে। কেননা যুদ্ধের কারণে এখন আমদানি-রপ্তানিতে শিপিং খরচ বেশি হচ্ছে। যুদ্ধ যদি অতিমাত্রায় দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিকখাতে প্রভাব পড়তে পারে। এক্ষেত্রে গম, সূর্যমুখী তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। যার জন্য আমরা গম আমদানির জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সকলকে এই সমস্যা মোকাবেলায় একত্রে কাজ করতে হবে। সবাইকে তৈরি থাকতে হবে এবং সাশ্রয়ী হতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা থেকে আমরা কাটিয়ে ওঠতে পারবো বলে আমি আশা করি।
কালের কণ্ঠ: স্পেন সফরে কেন এসেছেন? এটি কি আপনার ব্যাক্তিগত সফর, নাকি সরকারি?
টিপু মুনশি: এটি সরকারি সফর। আমার সঙ্গে দুজন ব্যবসায়ী এবং একজন সরকারি কর্মকর্তা এসেছেন। আমরা মূলত আলমেরিয়াতে যাচ্ছি। কৃষিখাতে গম, ভুট্টা উৎপাদনে বাম্পার ফলন হয়েছে স্পেনে। অনেক সাফল্য অর্জন করেছে তারা। মূলত এই সকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা এবং তাদের কর্ম পদ্ধতি আমরা সরাসরি দেখবো। আগামীকাল আলমেরিয়াতে বিভিন্ন বৈদেশিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর চুক্তির বিষয়ে বলা যাবে।
গত ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সাল থেকে টিপু মুনশি শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং সাশ্রয়ী হতে আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
সূক্র: কালেরকন্ঠ