সাকিব ইস্যুতে রণক্ষেত্র মিরপুর

লস অ্যানজেলেস থেকে দুবাই চলে এলেন সাকিব আল হাসান। দেশের মাটিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের  ইতি টানার স্বপ্ন পূরণ হওয়া যেন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু হলো না, দেশ থেকে বার্তা দেয়া হলো তাকে নিরাপত্তা দেয়া যাবে না। দেশে এলে তার দায়িত্ব নেবে না সরকার। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের জন্য এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। গেল বুধ ও বৃহস্পতিবার ক্ষণে ক্ষণে হলো নাটক। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা সংকটের কারণে তিনি নিজেই দেশে না আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে বৃহস্পতিবার অবস্থান নিয়েছিলেন সাকিব-বিরোধীরা। তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন। জানিয়ে দেন সাকিব দেশে ফিরলে প্রতিহত করা হবে। এরপরই সাকিবের ভক্তরা ঘোষণা দিলেন লং মার্চের। গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে এসে তারা অবস্থান নিলেন। কিন্তু সেখানে বিপত্তি, তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আক্রমণ করেন কে বা কারা। তাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই। তারা পালন করলেন রহস্যময় নীরব ভূমিকা। তাতেই গতকাল মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। সারা দিন মাঠের  ভেতরে অনুশীলন করে গেল বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা দল। প্রথম টেস্টে সাকিবের খেলা হচ্ছে না কিন্তু এই ঘটনাতে না থেকেই যেন থাকলেন সাকিব! এমনকি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সংবাদ সম্মেলনে যতটা না ম্যাচ নিয়ে আলোচনা তার চেয়ে বেশি সাকিব নিয়ে প্রশ্ন। অধিনায়ক নিজেও জানালেন সাকিবের এই ভাবে বাদ পড়া দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই পরিকল্পনা ছিল আমাদের। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাকিব। শুধু বাংলাদেশ বলবো না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যেকোনো কারণেই হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেকটা খেলোয়াড় মনে করে এটা পেন্ডিং থেকেই গেল।’

সাকিবের শেষ ইচ্ছা ছিল তিনি দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন। অনেক নাটকীয়তার পর তাকে রেখে স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দেশের বিমানও ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানায় দেশের ক্রিকেট সমর্থকগোষ্ঠীর একটি অংশ। ওই পরিস্থিতিতে সবুজ সংকেত না পেয়ে দুবাই থেকে ফিরে যান বাংলাদেশের বাঁহাতি অলরাউন্ডার। তাকে বাদ দিতে বাধ্য হন নির্বাচকরা। পরদিন সাকিবকে ফেরানোর দাবিতে মিরপুরে স্টেডিয়ামের সামনে বিক্ষোভ করেন তার সমর্থকগোষ্ঠী।

গতকাল দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে লং মার্চ করার কথা সাকিব ভক্তরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুপুর ২টার দিকে স্টেডিয়ামের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তারা। সংখ্যায় তারা খুব বেশি ছিলেন না। শ’খানেক লোক মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দীর্ঘক্ষণ ধরে মিছিল করতে থাকেন ও দুই নম্বর গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও পুলিশ তাদের যেতে দেয়নি। দুই নম্বর গেট থেকে প্রশিকার মোড় পর্যন্ত ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলেন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা। তাদের দাবি, সাকিব দেশের হয়ে অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন। তাকে তাই দেশের মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক।
এরপর প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্টেডিয়ামে থাকা সেনাবাহিনী এবং পুলিশ স্টেডিয়ামে অবস্থান করেছিলেন। ফলে শ’খানেক সাকিব ভক্তের জন্য স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এ সময় হুট করেই অবস্থান কর্মসূচি চলার একপর্যায়ে বাঁশ ও লাঠি নিয়ে কয়েকজন লোক এসে তাদের ওপর হামলা চালায়, তারা লাঠিপেটা করেন। এতে করে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় সাকিব ভক্তদের। দু’পক্ষের মারামারির একপর্যায়ে সানি মিয়া নামের এক সাকিব-ভক্ত সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সানির দাবি, তিনি সাকিবের জন্য এসেছিলেন। বলেন, ‘আমি কেবল চেয়েছি সাকিব শেষ ম্যাচটি খেলুক। কিন্তু সাকিববিরোধীরা আমাকে ধাওয়া দেয়। আমি দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করি। তখন আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে। আমি কোনো অন্যায় করিনি। বাংলাদেশকে যে ক্রিকেটার সম্মান এনে দিয়েছে, তার সম্মানজনক বিদায় দেখতে চাওয়া তো অপরাধ নয়।’

এই সাকিব বিরোধিতা হতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ক্ষতির কারণ। সারা বিশ্বে এই ঘটনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে হতে পারে ভুল ধারণা। দক্ষিণ আফ্রিকা দল নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বাতিল করতে পারে সিরিজ। এমনকি অন্য দলগুলোও বাংলাদেশ সফর বাতিল করতে পারে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে নারী বিশ্বকাপ দুবাইয়ে আয়োজন করতে হয়েছে বিসিবিকে। এমন চলতে থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর পড়তে পারে বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব।

সর্বশেষ