বশেফমুবিপ্রবিতে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কর্মসূচি;সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বশেফমুবিপ্রবিতে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কর্মসূচি;সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি,

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ব্যানারে আবরার ফাহাদের পঞ্চম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে মৌন মিছিল ও স্মরণ সভার একটি প্রোগ্রাম সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশে আসে। ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য এমন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

রবিবার (১৩ আগস্ট) সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ইকরাম হোসেনের আইডি থেকে ৫ দিন আগে দেওয়া ছাত্রদলের প্রোগ্রামের পোস্টটি হঠাৎ প্রকাশ্যে আসে। তার এ পোস্টে দেখা যায় “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাবিপ্রবি, জামালপুর” লেখা ব্যানারসহ পাঁচ টি ছবি সংযুক্ত রয়েছে। ছবিগুলোর মধ্যে একটি একাডেমিক ভবন মাঠে ও একটি জামতলা চত্বরে ছাত্রদলের ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি তিনটি ছবি একাডেমিক ভবন কনফারেন্স রুমে তাদের প্রোগ্রামের। পোষ্টে দেখাযায় সেখানে তারা ছাত্রদলের ব্যানারে ঝুলিয়ে প্রোগ্রাম করেছে। এতে অংশ নেয় ছয় শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি ছবিতে শিক্ষার্থী মোঃ ইকরাম হোসেনকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এছাড়াও সেখানে দেখা যায় সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ ও মারুফ, ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মিয়াদ এবং সমাজ কর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখারুল ইফতি ও সাখাওয়াত হোসেন জিকু বসে ছিলেন। গত ৭ অক্টোবর হওয়া এ প্রোগ্রামের ফেসবুক পোস্ট টি এখন আর তার আইডিতে দেখা যাচ্ছে না।

ক্যাম্পাসে তাদের এই রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলে এবং আপত্তিও জানায়। মুস্তাফিজুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী তার আইডি থেকে পোস্টের মন্তব্য লেখেন, ‘বলা হয়ছিলো ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক ব্যানার চলবে না তাহলে এটা কি কারণে করা হইলো? রাজনৈতিক আদর্শ কি শুধু আপনাদের একারই আছে? এমন কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।’

এদিকে, গত ৯ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিবর্গের সাথে জরুরি আলোচনার ভিত্তিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরণের রাজনৈতিক সংগঠন, ছায়া সংগঠন এবং এর কার্যক্রমের সাথে সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্তে এক আদেশ জারী করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাজনৈতিক ব্যানারে প্রোগ্রাম করা ও ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা নিয়ে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেনে বলেন, আবরার ফাহাদ স্মরনে তার কথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্যই মূলত প্রোগ্রামটি ছিলো। অন্যান্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এখানেও ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত না। এখানে কোন কমিটি নেই। আমরা পদপ্রাপ্ত নেতা না। সবাই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সেই জায়গা থেকে একসাথে বসে আলাপ করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই একাডেমিক ভবনের কনফারেন্স রুমে প্রোগ্রামর বিষয়ে তিনি বলেন, আমারা প্রথমে জাম তলা বসেছিলাম। বৃষ্টি আসায় একাডেমিক ভবনে গিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে সকল ক্লাস ও অফিস বন্ধ থাকায় কনফারেন্স রুমে বসি। সময়টা মাগরিবের আযানের পূর্বে হবে সম্ভবত।

৫ দিন পর হঠাৎ ফেসবুক পোস্ট টি সামনে আসা এবং নেই হয়ে গেলো কিভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এ বিষয়ে আমি নিজেও জানি না, যথেষ্ট সন্ধিহান। গত মাসের শেষের দিকে আমার ফোন চুরি হয়েছিল এবং এর কয়েক দিন পর হাতে পাই। সে ক্ষেত্রে কি হয়েছে না হয়েছে আমি নিজেও জানি না। আইটি বিশেষজ্ঞও না আমি। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে এ বিষয়ে আমরাও আইনি পদক্ষেপ নিব।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, বিষয় টা আজ সকালে জানতে পেরেছি। কোন একটি বিশেষ দল যদি এরকম একটি প্রোগ্রাম করে সেটা দেখে অন্যান্য দলও করতে পারে। তাতে একটা বিশৃঙ্খলা হতে পারে। যারা এটি করেছে তাদের বিষয়ে আলোচনা করে দেখি কি করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক এবং একাডেমিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতিনির্ধারকেরা মিলে এক আদেশে সকল রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। এর পর রাজনৈতিক প্রোগ্রাম হয়েছি কি না জানা নেই। কনফারেন্স রুমে হওয়া ছাত্র সংগঠনের একটি প্রোগ্রামের কিছু ছবি আজ নজরে আসে। কনফারেন্স রমে কোন প্রোগ্রাম করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। তাদের এই প্রোগ্রামের বিষয়ে কেউ অবিহিত করন বা অনুমতি নেয়নি। যেহুতু বিষয়টি নজরে এসেছে সেহেতু আমারা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।

সর্বশেষ