বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে ডিম ও মুরগির এবং সবজির দাম

রাজধানীর বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম, মুরগি এবং সবজির দাম বেড়েছে। খুচরা দোকানে ডিম প্রতি ডজন ৫ থেকে ১০ টাকা এবং মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। বেশ কিছু সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে নিত্যপণ্য ঢাকায় ঠিকমতো আসছে না।

সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচাবাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে।

এদিকে সাত হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে পৌঁছে বলে চড়া দামে ডিম কিনতে হয় ভোক্তাকে। এত মধ্যস্বত্বভোগী থাকায় ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক সভায় এই কথা বলেন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের গোল বেগুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না গাজর ১৮০ টাকায়, ঢেঁড়স, পটোল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজারগুলোতে লালশাক ১৫ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১৫ টাকা, পালংশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিলন খান বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এতে কিছু সবজির দাম বেড়েছে।’

এদিকে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বেঁধে দেওয়া দামের সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। খুচরা পর্যায়ে সরকারনির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারনির্ধারিত দর প্রতি ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ সংকটে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় এবং সোনালি মুরগি মানভেদে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির সরকারনির্ধারিত দর প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা। সোনালি মুরগি খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত দর কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা।

রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারের জিহাদ ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা মো. বায়োজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে মুরগি আসছে না। এতে মুরগির বাজার বাড়তি।’

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এর পরও দাম কমছে না। খুচরায় মানভেদে কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুনের কেজি ২৪০ টাকা এবং আমদানি করা বড় রসুন ২২০ টাকা। প্রতি কেজি আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও আদা মানভেদে ২২০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে ডিম কিনতে হয়। সরাসরি ফার্ম থেকে কেনা যায় না। এই ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা রসিদও পাওয়া যায় না। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করে।

মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরাসরি ফার্ম থেকে ডিম কিনতে পারলে ও সরকারনির্ধারিত দামে পেলে রাজধানীতেও কমবে ডিমের দাম। ন্যায্য মূল্যে ডিম বিক্রি সম্ভব হবে।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, নির্ধারিত দাম ফার্ম পর্যায়ে কার্যকর করলে আড়ত পর্যায়ে দাম কমবে।

আর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল জানান, সাত হাত বদলের কারণেই ডিমের দামে অস্থিরতা, দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। আড়তে অযৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করা হলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এক লাখ ডিমে একজন ব্যবসায়ী ২০ হাজার টাকা লাভ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা অবশ্যই লাভ করবেন, কিন্তু তা যৌক্তিকভাবে হতে হবে। তা না হলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ভোক্তা অধিকারের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ডসহ কোনো স্থানে চাঁদাবাজি হলে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদাবাজি বন্ধে কাজ করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার। আর সংগঠনটির প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, উত্সমুখী সমস্যা সমাধানে কাজ করবে ভোক্তা অধিকার।

 

সর্বশেষ