অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

 

অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। সরকার তিন নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর দাম আরও বেড়ে গেছে। মুরগির ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম আগের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর দুই সপ্তাহ আগে আলু ও পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হলেও সুফল নেই। সব মিলে দাম বেড়েছে সব সবজির। গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য মিলেছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দর ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। সেই হিসাবে প্রতি ডজনের দর দাঁড়ায় প্রায় ১৪৩ টাকা। যখন ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রতি ডজন বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে। যা এরপর আরও বেড়ে এখন ১৬৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেঁধে দেওয়ার পর হালিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম।

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

একই অবস্থা ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির ক্ষেত্রেও। বাজারে যখন প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ১৭০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল, তখন সরকার দাম বেঁধে দেয় প্রতি কেজি যথাক্রমে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা। এরপরই কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে এসব মুরগির দাম। এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। উৎপাদনকারী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী কেউই মানছেন না বেঁধে দেওয়া দাম। ফলে আমিষ জাতীয় খাদ্যপণ্য দুটি আগের চেয়ে বাড়তি দমে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।আলু ও পিঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর পরও বাজারে প্রতি কেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। পিঁয়াজ রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম দাম প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। দুটি ব্যবস্থাই এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে।

কিন্তু দেশের বাজারে এর প্রভাব নেই। এ ছাড়া বাজারে আলুর দামও কমেনি। প্রতি কেজি আলু আগের মতো ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০-২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়। সবজির বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০, করলা ৬০-৮০, ঢ্যাঁড়শ ৫০-৬০, বরবটি ৬০-৭০, মুলা ৫০, লতি ৬০-৮০, কহি ৬০, পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁপে ৩০, কচুরমুখি ৬০-৭০, টমেটো ১৫০-১৬০, শিম ১৮০-২০০, শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। বাজারে লালশাকের আঁটি ২০, পাটশাক ১৫, পুঁইশাক ৩০, লাউশাক ৪০, মুলাশাক ২০, ডাঁটাশাক ২০, কলমিশাক ১০-১৫ ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। মাছের দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। বেশির ভাগ মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়। এ ছাড়া চাষের পাঙাশ ২০০-২২০, তেলাপিয়া ২২০-২৫০, চাষের কই ২৪০-২৮০, চাষের শিং প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০, কোরাল ৭৫০, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, বোয়াল ৭০০, আইড় ৭৫০-৮০০, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগে থেকেও এখন বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে। যার ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে সরকারের সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

 

সর্বশেষ