ইবির আল ফিকহ বিভাগ; সেশনজট নিরসন ও নাম পরিবর্তনসহ ১৭ দাবি শিক্ষার্থীদের

ইবি প্রতিনিধি:

সেশনজট নিরসন, বিভাগের নাম পরিবর্তন এবং একাডেমিক সিলেবাস পরিবর্তনসহ বিভাগ সংস্কারে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রবিবার ( ১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন ভবনের বিভাগটির হল রুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের এক মতবিনিয় সভায় শিক্ষার্থীরা এসব দাবি তুলে ধরেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন, অধ্যাপক ড. আবুবকর মো. জাকারিয়া মজুমদার, অধ্যাপক ড. নাজিমুদ্দিন, অধ্যাপক ড. এ. কে. মুহা নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. হামিদা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারুল ওহাব এবং অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেনসহ বিভাগটির কয়েক শ শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-

সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত বিভাগ গড়ে তুলতে নতুন একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করে ২০১৯-২০২০ ও ২০২০- ২০২১ শিক্ষাবর্ষের সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি সেমিস্টারের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে হবে। বিশেষ বিবেচনায় প্রয়োজনে দুই সেমিস্টার একত্রে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ যথাক্রমে ২০২৫ এ জুন ও ডিসেম্বরের মধ্যে অনার্স শেষ করতেই হবে। ২০২১- ২০২২ ও ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রতিটি সেমিস্টার চার মাস ভিত্তিক করতে হবে। পরবর্তীতে যেন সেশনজট না হয় সেক্ষেত্রে যথাযথ কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রত্যেকটি শিক্ষাবর্ষের সাথে অন্য শিক্ষাবর্ষের যে একাডেমিক জটিলতা তা নিরসন করতে হবে। বিভাগের নামের লিগ্যাল স্ট্যাডিজ অংশের অস্পষ্টতা দূর করে যৌক্তিক ও যুগোপযোগী নামকরণ করতে হবে।
প্রস্তাবনা, ‘ল এবং ফিকহ’ অথবা ‘ফিকহ এবং ল’। আইন ও ফিকহ কোর্সের একটি সুন্দর মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্যে, ইউজিসির নীতিমালা মেনে, সিলেবাস সংস্করণ করতে হবে যা ফিকহ এবং আইন কোর্সের মৌলিক জ্ঞান নিশ্চিত করবে। যেখানে আইনের কোর্সগুলো হবে বিজেএস এবং বার কাউন্সিল পরীক্ষা কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থী বান্ধব বিশেষায়িত ক্লাস রুটিন প্রণয়ণ ও ক্লাস সংখ্যার পরিমাণ কমিয়ে গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। মূল পরীক্ষার ফলাফল প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল পরীক্ষকের মার্কস নোটিস বোর্ডে প্রকাশ করতে হবে। প্রত্যেক কোর্সের ইন্টার্নাল ইভ্যালুয়েশন এর মার্কস মূল পরীক্ষার পূর্বেই নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। পরীক্ষার শুরুর দিন থেকে নিয়ে সর্বোচ্চ ৪০ দিন সময়ের মধ্যে নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট প্রদর্শন করতে হবে। কোন শিক্ষক দ্বারা কোনো শিক্ষার্থীর ইন্টার্নাল ইভ্যালুয়েশন, মূল্যায়নের খাতা ও ভাইভা পরীক্ষা যাতে ব্যক্তিগত আক্রোশের মাধ্যম না হয় বিভাগ তা নিশ্চিত করবে।

ইভটিজিং এবং শিক্ষার্থী হয়রানির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে অভিযোগ বক্স চালু করতে হবে। প্রতি সেমিস্টারে বিভাগ স্ব- প্রণোদিত হয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে যা একটি জবাদিহিতার জায়গা তৈরি করবে এবং উক্ত সভায় শিক্ষকবৃন্দের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষকবৃন্দের ক্লাস মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে (রেটিং পয়েন্ট আকারে) এবং বিভাগ তা সেমিস্টার ভিত্তিক রিপোর্ট আকারে বিভাগের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করবে। স্বাধীন ও স্বকীয় বিভাগ হিসেবে এ বিভাগে অন্য বিভাগের কোনো শিক্ষক হস্তক্ষেপ করতে পারবে না ও করতে দেয়া হবে না। যে সকল শিক্ষক এরকম ঘটনা ঘটাবে বা যারা তাদের সহযোগী হবেন বা তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কূটকৌশলের অংশ হবেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

অযাচিত কারণে কোনো শিক্ষার্থীর সাথে দূর্ব্যবহার করা যাবে না। এমন কিছু ঘটলে সংশ্লি আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিভাগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। দূর্ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্লাস রুম, সেমিনার লাইব্রেরী ও কমন রুমের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। যেমন: ত্রুটিযুক্ত সাউন্ড সিস্টেম, এসি, ফ্যান ও লাইট প্রয়োজন অনুসারে অতিদ্রুত সংস্কার করতে হবে। সেমিনার লাইব্রেরী, শরিয়াহ ক্লিনিক, জুরিস্টিক ক্লিনিক এবং মুট কোর্ট এর কার্যক্রম চালু করতে হবে।নবীন বরণ এবং প্রবীণ বিদায়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং বার্ষিক বনভোজনে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারীর উপস্থিতি এবং বিভাগীয় অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতে হবে। কো-কারিকুলাম একটিভিটিজ, আন্তঃবিভাগ এবং আন্তঃ সেশন সকল খেলায় বিভাগের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ করতে হবে।

এসময় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, উত্থাপিত দাবিগুলো যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী৷ আমরা সব গুলো দাবি নিয়েই কাজ করব। দ্রুত সময়ের মধ্যে মিটিং দিয়ে দাবিগুলো বাস্তবায়নে কাজ করব। যার ফলাফল আমি খুব দ্রুত জানাতে পারব। যে সকল দাবি বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘমেয়াদী সময়ের ব্যাপার সেগুলোর জন্য আমাদের সময় দিতে হবে। আর যেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা সম্ভব আমরা তা দ্রুত কার্যকর করব।

সর্বশেষ