বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী

বৃষ্টি, বন্যা আর সরবরাহের অজুহাতে বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। বন্যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচা বাজারে। সবজি ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাঁচা মরিচ, বেগুনসহ বেড়েছে বেশকিছু সবজির দাম। ডজনে পাঁচ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। তবে আগের বাড়তি দামেই স্থির আছে অন্যান্য নিত্যপণ্য। তবে অন্য এলাকা থেকে সরবরাহ ঠিক থাকলে বড় কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত জুলাইয়ের শেষদিকে সবজির দর ছিল আকাশচুম্বী। বেশ কয়েকটি পণ্যে সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরের কিছুদিন নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুটা স্বস্তির দেখা মিলেছিল। কিন্তু সেই স্বস্তি দীর্ঘ হয়নি।

নানা অজুহাতে বাড়ছে পণ্যের দাম। আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের পূর্ব সীমান্তের সব জেলা। এরই মধ্যে এর আঁচ লেগেছে রাজধানীর বাজারে। বৃষ্টির দোহাই দিয়ে দিনের ব্যবধানে সব ধরনের সবজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। দু-দিন আগে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে দেখা গেছে, পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ১০০-১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা কেজি, কাঁকরোল ৮০ টাকা, শশা ৪০, পটোল ৫০, গাজর ও টমেটো ১৫০, লাউ ৮০ টাকা পিস। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৫০, গাজর ১২০-১৪০, লেবুর হালি ১০-২০, ধনেপাতার কেজি ৬০, কলার হালি ৪০, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা জানান, কোনো কিছুর দাম কমেনি। বাজারে সবকিছুর অনেক দাম। গরিব মানুষ কিনে খাওয়ার মতো দাম নেই বাজারে।
এদিকে ডিমের ডজন মাস খানেক আগে একশো ৪৫ টাকায় স্থির থাকলেও বন্যার অজুহাতে দু’দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে। ডিমের ডজনে ৫ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। তবে মুরগির বাজার অপরিবর্তিত। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭০ থেকে ১৭৫ ও সোনালি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই চড়া আলু ও পিয়াজের দর। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুতে পাঁচ আর পিয়াজে কমেছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আলুর কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় স্থিতিশীল। যদিও মহল্লায় মিলছে না ৬০ টাকার নিচে। দেশি পিয়াজ ১১০ থেকে ১২০ ও পাকিস্তানি পিয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যসব নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই।
এখনো স্বস্তি আসেনি চালের বাজারে। মোটা, সরু ও মাঝারি সব ধরনের চাল কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫২ থেকে ৫৫ এবং মাঝারি চাল (বিআর-২৮ ও পাইজাম) ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মানভেদে সরু চালের কেজি (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭৮ টাকায়। মাসখানেক আগেও মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৩ এবং মাঝারি চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। তখন সরু চালের কেজি ছিল ৬২ থেকে ৭৬ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য, এক মাসে চালের দর বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধির হার আরও বেশি ৯ শতাংশ।
কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, একমাস ধরে বাড়ছে চালের দাম। প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। মিলাররা ধান সংকটের অজুহাত দিচ্ছেন। আরেক চাল বিক্রেতা বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মিলে যেতে হবে। মিল যদি কন্ট্রোল করা যায় তাহলে পাইকারি বাজারে দামের প্রভাব পড়বে না।
মাছের বাজারও কিছুটা নিম্নগতি। বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ার কারণে অন্য মাছের চাহিদা কমেছে। দামও পড়তি। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেনা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকায়। এদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা কেজি দরে।

 

সর্বশেষ