রাজধানীতে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

রাজধানীতে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

হাসানুজ্জামান সুমন,বিশেষ-প্রতিনিধি:

৩০ জুন ২০২৪ জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ বাতিলের দাবিতে মীরপুর বাংলা স্কুলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মাববন্ধনে অভিভাবক জাকারিয়া রাজিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শিশু ও শিক্ষা রক্ষার আহবায়ক রাখাল রাহা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সচেতন অভিভাবক সমাজের আহবায়ক মুসলিম বিন হাই। স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধা সৃষ্টি করলেও অভিভাবকরা এই আন্দোলন চালিয়ে যান।
বক্তারা বলেন, গতবছর ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সাধারণ ধারার শিক্ষায় ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে একমুখী সমন্বিত শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এ বছর তা ২য়, ৩য়, ৮ম এবং ৯ম শ্রেণীতে চালু হয়েছে, এবং ২০২৫ সালে এটা ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণীতে চালু হবে। এরপর ২০২৬ ও ২০২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে চালু হবে।
এই কারিকুলামের কারণে আমাদের শিক্ষার মানের যে আরো পতন হবে সে—বিষয়ে সচেতন শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ দেশ—বিদেশের বহু মানুষ কারিকুলাম প্রণয়নের সময় থেকেই বলে আসছিলেন, লিখে আসছিলেন এবং নানা কর্মসূচীও গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু সরকার সেকথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি।
আজ কারিকুলাম চালু হওয়ার দেড় বছরের মাথায় সারাদেশের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে, তথাকথিত স্মার্ট নাগরিক বানানো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বানানোর এই কারিকুলামের মাধ্যমে যেটুকু লেখাপড়া ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। প্রতিদিন নিত্য—নতুন নির্দেশনা দেয়া ও বাতিল করা, কিভাবে পরীক্ষা হবে এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কতৃর্পক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হযবরল নির্দেশনায় ছাত্র—শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়, বিপন্ন।
আপনারা জানেন এদেশের শিশুরা ছোটবেলায় পুতুল খেলতে অভ্যস্ত। আজ সরকার যেন কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমনই পুতুল খেলছে। শিশুদের পুতুল খেলার মধ্যে তাদের আবেগ—বিবেক কাজ করে, তারা সেই খেলার মাঝেই হাসে—কাঁদে। কিন্তু আজ এদেশের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে যারা পুতুল খেলছে তাদের কোনো আবেগ—বিবেক নেই। তারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় এই ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করছে। আপনারা জানেন এসব যজ্ঞ শুরুর সময় তারা অনেক আশার কথা শোনায় এবং সেটা ব্যর্থ হলে আবার আরেকটা হাজির করে। আগেরটা কেন ব্যর্থ হলো, এর জন্য কে দায়ী, কে জবাবদিহি করবে, এই ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে এ বিষয়ে তখন তারা বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু সন্তানের শিক্ষার এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে যখন অভিভাবক, শিক্ষক বা সচেতন মহল কথা বলেন, প্রতিবাদ করেন তখন কিন্তু তারা জেগে ওঠে। তারা তখন রাতের আঁধারে অভিভাবকদের গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নিয়ে মিথ্যে মামলা সাজিয়ে জামিন না—মঞ্জুর করে হাজতখানায় পাঠিয়ে দেয়। তাদের প্রতিবাদ আয়োজন ভণ্ডুল করে দেয়। নিতান্ত স্বাক্ষর সংগ্রহের মতো নিরীহ কর্মসূচীতেও তারা পুলিশ ও গুণ্ডাপাণ্ডা নামিয়ে পণ্ড করে দিতে চায়।
এই যে পরিস্থিতি এ থেকে আমরা অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজ নিষ্কৃতি চাই। আমাদের সন্তানের জন্য ভালো মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আগে ভালো শিক্ষক দরকার, তাদের ভালো বেতন দরকার, ভালো প্রশিক্ষণ দরকার, তাদের স্বাধীনতা দরকার, স্কুল—কলেজের উপর থেকে দুবৃর্ত্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির অপসারণ দরকার, প্রশাসনিক হয়রানি থামানো দরকার। কিন্তু তা না করে প্রতিনিয়ত শিক্ষার উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার আরো পতন ঘটছে। আমাদের সন্তানরা শেষ হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে আমাদের শিক্ষার মান একেবারে নীচে চলে গেছে। এমনকি যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তদানের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, আজ সেই পাকিস্তানের চেয়েও আমাদের শিক্ষার মান অনেক নীচে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে!
আজকের এই মানববন্ধন থেকে আমরা বলতে চাই, শিক্ষার মানের এই ধারাবাহিক পতনের পথ থেকে সরকারকে সরে আসতেই হবে। তার জন্য অবিলম্বে সমন্বিত একমুখী শিক্ষা কারিকুলামের নামে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার সাথে পুরোপুরো বেখাপ্পা ও ধ্বংসাত্মক এই কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।

সর্বশেষ