বৃষ্টি-জলজটে স্থবির রাজধানী

 

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় গতকাল ভোররাত থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। এই বৃষ্টি চলছে দিনভর। সঙ্গে ঝড়ো বাতাস। বিরতিহীনভাবে এই বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বিভিন্ন এলাকায়। ডুবে যায় বহু সড়ক এবং অলিগলি। সেই সঙ্গে তৈরি হয় গণপরিবহন সংকট। ভোর থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টির কারণে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। আর একটানা চলা এই বৃষ্টির কারণে নগর জুড়ে দেখা দেয় দুর্ভোগ। ঝড়ো বাতাসের কারণে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় গাছও ভেঙে পড়ে।

রেমালের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানি জমে জলজট ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বাড্ডা, গ্রীন রোড, নিউমার্কেট, ধানমণ্ডি ২৭, মানিক মিয়া এভিনিউ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, গুলশান লেকপাড় এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

 

mzamin
এসময় এসব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় সকাল থেকে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিকালে ওই এলাকায় জলজট আরও বাড়ে। সড়কে পানি থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।

রাজধানীতে রাতের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সকালে রূপ নেয় ভারী বর্ষণে। কাজের প্রয়োজনে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাইরে বের হয়েই নাকাল হতে হয় কর্মজীবীদের। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হওয়ায় ছাতা উড়িয়ে নেয়ার উপক্রম হয়। খেটে খাওয়া মানুষরাও বিপাকে পড়েন। এ ছাড়া ঝড়ো বাতাসের কারণে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় গাছও ভেঙে পড়েছে। মিরপুর পাইকপাড়া এলাকায় সরকারি ডি-টাইপ কোয়ার্টার এলাকায় বড় আকারের একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ ঝড়ে ভেঙে গেছে। এসময় ওই এলাকার চলাচলের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীরা বলেন, কয়েকদিনের গরমের পর বৃষ্টিতে প্রকৃতি শীতল হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে চারদিক থেকে দমকা বাতাসে ছাতা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে পানি জমায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বিড়ম্বনায় পড়েন কাজে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ভ্যান দিয়ে সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে অনেকেই রাস্তায় বাস পাননি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকেরা বৃষ্টির কারণে বাড়তি ভাড়া চেয়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা থাকায় অটোরিকশা চালকেরা যেতে রাজি হননি। অনেকে গণপরিবহনের অপেক্ষায় থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ভিজে গেছেন।

সোমবার বেলা ১১টায় অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, রেমাল এখন স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে যশোর ও এর কাছাকাছি এলাকায় আছে। এটি আরও উত্তর-পূর্বদিকে এগিয়ে যাবে। আরও বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে।

ওদিকে সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন দেখা দেয়। সকাল থেকেই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। পরে সকাল ১০টার পরে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে একটি মেট্রোরেল ছাড়ে। তবে সেটারও চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যার কারণে অনেক যাত্রী স্টেশন থেকে ফিরে যান। পরে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আবার চলাচল শুরু হয়। তবে দিনভর ধীরগতিতে চলে ট্রেন। মাঝে মাঝে ট্রেন থেমে থাকে বিভিন্ন স্টেশনে। এ কারণে যাত্রীরা সময় ধরে ট্রেনে চলাচল করতে পারেননি। বিকালে ফার্মগেট স্টেশনে আটকে থাকা যাত্রী নাইম বলেন, কাওরান বাজার যেতে আধা ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেন ধীরগতিতে চলায় সময় বেশি লেগেছে।

সকালে পল্লবী স্টেশনে অনেক যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছিলেন। তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ট্রেন পাননি। পরে টিকিট ফেরত দিয়ে তারা বাস বা অন্য যানবাহনে গন্তব্যে যান।

সর্বশেষ