নছিমন বিবির সড়কেই বাড়ি সড়কেই ঘর

এম এইচ শাহীন, গাজীপুর প্রতিনিধি:

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা জমসের আলীর স্ত্রী নছিমন বিবি (৮০) বছর। থাকেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝে ডিভাউডারের পরিত্যাক্ত জায়গায়। বৃষ্টিতে ভেজা আর রোদে শুকানো তার নিত্যনিয়তি। কাছের মানুষেরা খোঁজ নেয় না, তিনি ক্ষুধার্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেন রাস্তায় অথবা মাজারে।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝে ডিভাউডারের উপর তাকে দেখা যায় মাটির গর্তের চুলায় কড়াইতে বাজার থেকে কুড়ানো সবজি আর হোটেলের পঁচা-বাসী মাংস রান্না করছেন। মাংসে পড়ে আছে বিভিন্ন ধরনের ময়লা। সড়কের ধুলাবালিও উড়ে মিশছে তার খাবারে। এসব খাবার খেয়েই দীর্ঘদিন ধরে বেঁচে আছেন তিনি। কথা বলে জানা যায় তার নাম নছিমন বিবি।

নছিমন বিবির ভাষ্যমতে তার বয়স এখন ৮০ এর উপরে৷ তার স্বামীর নাম জমসের আলী। গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার শিমুলতলা এলাকায়। নব্বইয়ের দশকে তিনি কাজ করেছেন গাজীপুর জেলার কোনো একটি চাউলের মিলে। তিনি পাঁচ সন্তানের জননী৷ ৩ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে তার৷ এক ছেলে বর্তমানে পোড়াবাড়ি ফসিহ্ পাগলার মাজারে খেদমতের দায়িত্বে আছেন। মেয়ে দু’জন বাবার কাছে থাকে। তার অভিযোগ স্বামী সন্তানেরা খোঁজ খবর নেন না তার৷

ঈদ কেমন কেটেছে এবং ঈদে নতুন কাপড় পড়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বৃদ্ধা নছিমন বিবি বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে একজন বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে গেছিলো তাই খাইছি। তবে কে দিছে সেটা মনে নাই। নতুন কাপড় কিভাবে পড়বো? মানুষে দয়া করে যা টাকা দেয় তা খাই। সারাদিনে ১০০-১৫০ টাকা পাই তা দিয়েই জীবন চলে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা মায়ের মুখটাও মনে নাই। তারা কোথায় আছে কেমন আছে জানি না। সন্তানদের একবার বলেছিলাম আমাকে নিয়ে যেতে নেয়নি। উল্টো বলেছে আমি অনেক টাকা পাই তা মোটা অংকের টাকা। এর অনেকদিন পর একদিন আমায় নিতে এসেছিলো আমি যাইনি বলেছি আমার টাকাপয়সা সব আছে আমি যাবোনা। তারপর থেকেই সড়কেই বাড়ি আমার সড়কেই ঘর।’

পরিত্যক্ত জায়গায় নছিমন বিবি থাকেন এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পথচারী মমিন মিয়া বলেন, যে মানুষটি শেষ জীবনে এসে অসহায় ও নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। এর ব্যর্থতা পরিবার ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে, জানিনা কার ভাগ্যে কী আছে? এখন সুস্থ আছি কর্ম করতে পারছি পরিবারকে চালাইতে পারছি, একটা সময় বৃদ্ধ হবো তখন কে দেখবো।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস. এম. আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘খোঁজ খবর নিয়ে তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যদি তার পরিবার তাকে দেখা-শুনা না করে তাহলে তাকে সরকারী আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে।’

অসহায় এই নারীর পুর্নবাসনের জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ