PES 2013 Download for Windows 7/8/10/11 - PES2013

Download PES 2013 for Windows 7/8/10/11 and dive into the exciting world of soccer with PES2013. Experience realistic gameplay and enhanced football simulation.
Get it now for FREE !

Pes 2013 Download
২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা

 

বেতন বাড়ানোর দাবি ও শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে লাঠিসোঁটা হাতে পোশাককর্মীদের বিক্ষোভ। গতকাল বেলা পৌনে একটায় রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে

 

মজুরি বোর্ডের সভাপতি লিয়াকত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে বোর্ডের গতকালের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মজুরি হার চূড়ান্ত হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়িত হবে।

মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালো আলোচনা হয়েছে। মালিকপক্ষ আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে।’

অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা থেকে মজুরি বাড়বে। কত বাড়বে, তা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সভায় জানাব।’

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভা যখন চলছিল, তখন পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উত্তরার কার্যালয়ে মালিকেরা বৈঠক করছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে কারখানা বন্ধ করা হলে সেটি হবে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায়। এই ধারায় বলা হয়েছে, বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক কারখানা বন্ধ করতে পারবেন। এ রকম বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকেরা কোনো মজুরি পাবেন না।

২০১৮ সালে নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল ৮ হাজার টাকা। নতুন কাঠামো হওয়ার আগপর্যন্ত প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়ার কথা। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে নিত্যপণ্যের মূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকেরা চাপে পড়েছেন।

চলতি বছরের এপ্রিলে প্রায় ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়। পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভারেও শ্রম অসন্তোষ ছড়ায়। গত সোমবার দুজন শ্রমিক নিহত হন। মঙ্গল ও বুধবার মিরপুরে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, মালিকেরা চাইলে কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। তারপরই কারখানা বন্ধ ঘোষণা শুরু করেন মালিকেরা।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা, লক্ষ্মীপুরা তিন সড়ক এলাকায় গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, তুসুকা গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, এমএম নিটওয়্যার, পিএন কম্পোজিট, কলম্বিয়া অ্যাপারেলসসহ বেশ কয়েকটি কারখানার ফটকে বন্ধের নোটিশ ঝুলছে। শিল্প পুলিশ ও বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে বন্ধ থাকা কারখানার সংখ্যা ১৫০টির বেশি হবে।

অধিকাংশ কারখানা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। শনিবার কারখানা খুলবে। দু-একটি কারখানা আজ খুলবে। কিছু কারখানায় অনির্দিষ্টকাল বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আশুলিয়া ও জিরাব এলাকার মূল সড়কের দুই পাশের বেশ কিছু কারখানা গতকাল বন্ধ ছিল। সকালে তিন-চারটি জায়গায় কিছু শ্রমিক জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ তাঁদের পাল্টা ধাওয়া ও কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল (টিয়ার গ্যাস) ছুড়ে সরিয়ে দেয়। সকাল ১০টার পর শ্রমিক বিক্ষোভের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

মজুরি বৃদ্ধি ও হামলার বিচারের দাবিতে সকাল আটটার পর মিরপুর-১, মিরপুর-১০ এবং মিরপুর-১১ নম্বর এলাকায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। দুপুরে আন্দোলনরত পোশাককর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় যান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এ সময় শ্রমিকেরা হট্টগোল শুরু করেন। পরে সেখান থেকে তিনি চলে যান।

কারখানা বন্ধ থাকায় রপ্তানিবাজারের জন্য পোশাকের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যেমন গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের ছয়টি ইউনিট ১৫ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ হাজার জিনস প্যান্ট উৎপাদন করেন। তবে ২৩ অক্টোবর থেকে দিনে এক-দুই ঘণ্টার বেশি কাজ হয়নি।

তুসুকা গ্রুপের এসব কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন  বলেন, কয়েক দিন ধরে শ্রমিকেরা এসে কাজ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বহিরাগতরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তখন ছুটি দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। তিনি বলেন, প্রতিটি প্যান্টের রপ্তানি মূল্য গড়ে ৮-৯ ডলার। সেই হিসাবে লোকসান অনেক।

পোশাক কারখানার কয়েক জন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোশাকের ক্রয়াদেশের ভরা মৌসুম এখন। এ সময় আন্দোলনের কারণে বেশি দিন কারখানা বন্ধ রাখতে হলে বড় ক্ষতি হবে। অল্প কিছুদিন কারখানা বন্ধ রেখে শ্রমিক বিক্ষোভ স্তিমিত করতে পারলে সেটাই ভালো হবে। এ জন্য বিজিএমইএর নেতাদের পরামর্শে কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে মজুরি চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অতীতেও শ্রমিকদের শান্ত করতে কয়েক দিন কারখানা বন্ধ রাখা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থার কৌশল ভালো ফল দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন মালিকেরা।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি আমিরুল হক , কারখানা বন্ধ রেখে এখনকার সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। সমাধান হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণ করা।

বিজিএমইএতে বৈঠক

পোশাকশিল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে জরুরি আলোচনা সভায় দুই শতাধিক পোশাক কারখানার মালিক উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকেই নতুন কাঠামোয় বেতন দেওয়া হবে। ফলে তার আগে আন্দোলন, সহিংসতা ও ভাঙচুর অগ্রহণযোগ্য। এগুলো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বৈঠকে বলেন, কারখানা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে বা শ্রমিকেরা কাজে না গেলে ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নে সবাইকে একমত হতে হবে। এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে, সবাই তা মানবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, আশুলিয়ায় তাঁর চারটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অস্থিরতায় কারখানার কার্যক্রম চালানো খুবই কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মালিকেরা গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তাঁর কাছে মালিকেরা বাড়তি নিরাপত্তা দাবি করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও ছিলেন।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান রাতে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে শনিবার থেকে বন্ধ কারখানাগুলো খুলবে।

এদিকে বাংলাদেশে বাড়তি মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের ওপর নিপীড়নের নিন্দা জানিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক ইউনিয়ন ও বেসরকারি সংস্থার আন্তর্জাতিক জোট ক্লিন ক্লদস ক্যাম্পেইন (সিসিসি)। গতকাল তারা এক বিবৃতিতে শ্রমিকদের প্রতিবাদ করার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

‘মুদিদোকানে ১৫ হাজার টাকা বাকি’

গাজীপুরে শ্রমিকদের অধিকাংশই বাসায় শুয়ে–বসে সময় কাটান। কারখানা কিছুদিন বন্ধ থাকা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে তেমন উদ্বেগ দেখা যায়নি। তাঁরা বলেছেন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির কারণে চলার মতো মজুরি তাঁদের দরকার।

লক্ষ্মীপুরা এলাকায় একটি বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা পোশাকশ্রমিক মেহেদী হাসান বললেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী কারখানায় কাজ করেন। কিন্তু সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘যে বেতন পাই, তা দিয়ে সন্তানকে এখানে রাখা সম্ভব না।’

দুই দশক ধরে পোশাক কারখানায় কাজ করেন নাজমা আক্তার। একটি কারখানায় অপারেটর পদে এখনকার মজুরি সাড়ে ১০ হাজার টাকা। গত মাসে ওভার টাইমসহ মজুরি পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। তাঁর স্বামী ভ্যানচালক। তিন সন্তান রয়েছে। নাজমা আক্তার বলেন, জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। নানাভাবে ব্যয় কমিয়েছেন। তারপরও চলতে পারছেন না। মুদিদোকানে ১৫ হাজার টাকা বাকি। ঘরভাড়াও মাঝেমধ্যে বাকি থাকছে।

সর্বশেষ