PES 2013 Download for Windows 7/8/10/11 - PES2013

Download PES 2013 for Windows 7/8/10/11 and dive into the exciting world of soccer with PES2013. Experience realistic gameplay and enhanced football simulation.
Get it now for FREE !

Pes 2013 Download
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমা বিশ্বের নজরদারিঃ আধিপত্যবাদের শেষ কোথায়!

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বেজে উঠেছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকগণ এই ডামাডোলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ হতে প্রস্তুত হয়ে আছে। আর এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের পক্ষে রয়েছে এই দেশের সাধারণ জনগণ এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্যবাদী নজর সব সময়-ই অ-পশ্চিমা বিশ্বের উপর থাকে। এই পশ্চিমা বিশ্ব তাদের আরোপিত উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনমান ইত্যাদি চাপিয়ে দিয়ে যে আধিপত্য চর্চা করে বেড়ায় তা আরও বেশি স্পষ্ঠ হয় অ-পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশের নির্বাচনকালীন সময়ে। আর তাদের এই কর্তৃত্ববাদী আচরণ প্রকাশ পায় লক্ষ্যবস্তুতে পূরণ হওয়া দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে। কখনো এই নজরদারির গুনগান/জয়গান/মন ভোলানো গান, কখনো আবার কিছু না বুঝতে পেরেই চড়া বাজার দরে স্বজাতভূমির গণমাধ্যম সেই সংবাদ প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে আধিপত্যের রাজনীতিকে আরও উষ্কে দেয়!

সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারের ডাকা নির্বাচনের আহ্বানে বিদেশি নজরদারিতে ক্ষুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশের এই নাক গলানোকে বেশ বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। শুধু তাই নয়, এমন নজরদারি যেনো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের নীতির পরিপন্থিও। যে দেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন ও জনবান্ধব প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে, সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী শক্তির নজরদারিতে স্বজাতভূমি বাংলাদেশে প্রতিবাদের মিছিল নেমেছে। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সব থেকে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০জন শিক্ষক, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০জন শিক্ষক এই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছে যা দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই নজরদারি?

পশ্চিমা বিশ্ব সব সময়-ই অ-পশ্চিমা বিশ্বকে নজরদারিতে রেখেছে ঐতিহাসিকভাবে। শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তির প্রসারণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দর্শন ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার – সবগুলোরই লাগাম হাতে নিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব আর অপশ্চিমা বিশ্বকে বানিয়েছে তাদের খরিদ্দার। মূলত জ্ঞান উৎপাদন ও গণমাধ্যমের আধিপত্যই পশ্চিমা সমাজকে উপস্থাপন করেছে নির্ভেজাল হিসেবে আর অ-পশ্চিমা সমাজ তাদের উপাদানকে গোগ্রাসে গিলতে বাধ্য হয়েছে নানাবিধ মুখোশে।

শুধু তাই নয়, পশ্চিমা বিশ্ব অ-পশ্চিমা বিশ্বকে সংকট ও অসভ্যের ক্ষেত্র হিসেবেই উপস্থাপন করতে সম্মতি উৎপাদন করতে ব্যস্ত থাকে যাতে তাদের আধিপত্যের বাজার আরও প্রসারিত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের এই নজরদারি ঐ আধিপত্যেরও প্রকাশ!

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো সেই মুক্তির সাধ আওয়ামিলীগের নেতৃত্বে সাধারণ জনগণ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসারিত হয়েছে, শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে, কমেছে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা, নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বাল্যবিবাহ ও শিশু মৃত্যুওও। শুধু তাই নয়, সহনশীল আচরণেও বাংলাদেশ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে। এদের জীবন জুড়ে থাকে মমতাবোধ, প্রেম আর সাম্য।

এমন ঈর্ষান্বিত পরিস্থিতিতে অতীতকালের সংকটের বাংলাদেশের সাথে বর্তমান পরিবর্তনশীল এই বাংলাদেশের চেহারা বড্ড অপরিচিত পশ্চিমা বিশ্বের কাছে। তাদের গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদ বিশ্লেষণ করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে তারা বোধহয় খুব নিকট এক বাজার হারাতে বসেছে তাদের মতাদর্শ বাজারজাতকরণের।

আর তাই তো তাদের এতো নজরদারি। আর তাদের এই নজরদারি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয় বরং তা রাজনৈতিক-অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাজার হারানোর শঙ্কাও!

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ক্ষুধা মুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ যে প্রাণের সঞ্চার ফিরে পেয়েছে – সেই প্রাণ সঞ্চারিত মনোবল ভেঙে দিতে সব চেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে এই পশ্চিমা বিশ্বের নজরদারি।

বাংলাদেশের মানুষের যে মানসিক গড়ন ও জীবনবোধের প্রগাঢ়তা – তা কখনোই স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবকে ক্ষমতা কাঠামোতে টিকে থাকতে দেয় নি। এই ভূ-খণ্ডে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পতন হয়েছে, পতন হয়েছে পাকিস্থানি শাসনের অনাচারেরও। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও পতন হয়েছে দেশীয় স্বৈরাচারী শাসনেরও।

বিগত ৩টি নির্বাচন বাংলাদেশের বিদ্যামান সংবিধানের আলোকেই হয়েছে এবং জনগন সেখানে অংশগ্রহণ করেছে। আসন্ন নির্বাচনও সংবিধান মেনেই হবে। সাধারণ জনগণ যে রায় দিবে সেই রায় মেনেই দেশ শাসন হবে। এখানে পশ্চিমা নজরদারি আমাদের জন্যে হুমকির, আমাদের জন্মের ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিকও।

বাংলাদেশের যে মাটির মানুষ; আউল, বাউল, কবি, কৃষক, মুটে, মজুরসহ সাধারণ প্রাণ – তারা দেশীয় গণতন্ত্রকে ভক্তি দিয়ে পূজো করে এবং স্বদেশী কাঠামো নিয়েই সরকার গঠন করতে বদ্ধ পরিকর। ইউরোপ কিংবা আমেরিকার গণতন্ত্রের মডেলে নয়।

পুরো ইউরোপ ও আমেরিকা আজ পুড়ছে তাদেরই উৎপাদিত গণতন্ত্র মডেলের ব্যর্থ জ্বরে। মুখ থুবড়ে পড়েছে তাদের শাসন কাঠামোও। এমতাবস্থায় সেই গণতন্ত্রের আদলে বাংলাদেশের নির্বাচনে নাক গলানো কতোটা নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলো?

 

স্বজাত ভূমির স্বজাত শাসন গর্জে উঠুক আবার!

বিদেশী প্রভুর নজরদারি গাড়বো খাড়ায় এবার!

মুক্ত স্বাধীন মুক্ত পথে আসবে বিপত্তি যাদের!

মুক্তির গানে লড়বো সবাই এক প্রাণ হয়ে প্রাণের!

 

লেখকঃ আসিফ ইকবাল আরিফ, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

সর্বশেষ