দিনের শেষে বিশেষজ্ঞ আর সাধারণের মত এসে মিশে গেল এক বিন্দুতেই। যেখানে ব্যাটিং অর্ডারে বাংলাদেশের শুরুর সাজ-সজ্জা শ্রীলঙ্কার বোলিং পরিকল্পনা সাজানো সহজতর করেছে বলেই আলোচনা চলছিল। তাতে যোগ দিয়ে ক্রিস সিলভারউড নতুন কোনো বিতর্ক উসকে দিতে চাইবেন না স্বাভাবিক। তবে বৃহষ্পতিবার রাতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারানোর পর লঙ্কান দলের ইংলিশ হেড কোচ এটি অন্তত গোপন করলেন না যে বিষয়টি বিস্ময়কর ঠেকেছে তাঁর কাছেও।
প্রতিপক্ষের প্রথম চার ব্যাটারই যে ছিলেন বাঁহাতি! তা নিয়ে অবধারিত জিজ্ঞাসার মুখে বললেন, ‘আমি কিছুটা অবাকই হয়েছি। কিন্তু এটি ওদের কৌশল ছিল। তা নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
অবশ্য প্রতিপক্ষকে নাকাল করে ছাড়ার ক্ষেত্রে নিজেদের জমাট পরিকল্পনার কৃতিত্বও দাবি করতে ভুললেন না সিলভারউড, ‘‘ওদের ব্যাটিং অর্ডার আমাদের সাহায্য করেছে, এমন নয়।
আমাদের কী ছিল না? ডানহাতি ও বাঁহাতি স্পিনার ছিল, সেই সঙ্গে ছিল থিকশানার মতো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ও। আসলে আমরা প্রস্তুত ছিলাম সবধরনের ব্যাটারের জন্য। আমরা মাঠেও নেমেছিলাম সব দিক গুছিয়েই।অথচ এই দলটিই কিনা এশিয়া কাপ শুরুর আগে পাচ্ছিল শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির দলের মর্যাদা।
এক যোগে দলের তিন সেরা পেস বোলারকে চোটের কাছে বিসর্জন দেওয়ার পরও আরেক ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হতে তৈরি ছিলেন মাথিশা পাথিরানাও। ২০ বছর বয়সী তরুণ এই ফাস্ট বোলারের বাড়তি বাউন্স সাজঘরের পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমকে।
চোটে ছিটকে যাওয়া লেগস্পিনার ওয়ানিন্দু হাশারাঙ্গার অনুপস্থিতি বুঝতে না দেওয়া থিকশানা যেমন দুসরা আর ক্যারম বলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ভুগিয়েছেন, তেমনি পাথিরানাও খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করতে দেননি। সেই সঙ্গে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অফস্পিন এবং দুনিথ বেলালাগের বাঁহাতি স্পিনও লঙ্কান বোলিংকে আরো কার্যকরী করে তুললো বাংলাদেশের জন্যযদিও টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবের মনে হয়েছিল পাল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শুষ্ক উইকেটে প্রচুর রান করা যাবে। কিন্তু ব্যাটিং করার পর তাঁর মনে হয়েছে এটি আসলে ছিল ২২০-২৩০ রানের উইকেট।
বাংলাদেশ অবশ্য থেমেছে এর চেয়েও অনেক পেছনে (১৬৪)। ৪২.৪ ওভারে অলআউট হওয়া তো বটেই, ১১ ওভার বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কার জয়ও সাকিবদের সুপার ফোর পর্বে যাওয়ার সমীকরণ জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। আজ স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৪টা) কলম্বো থেকে লাহোরগামী ফ্লাইটে চড়ার সময় তাঁদের সঙ্গী হচ্ছে ৩ সেপ্টেম্বরের আফগানিস্তান ম্যাচ জেতার বাধ্যবাধকতার চাপও।কিন্তু সেই ম্যাচ জিতলেও কি শেষ রক্ষা হবে? হলেও পার হতে হবে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র বাঁধা। দুই গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে যাবে দুটো করে দল। ‘বি’ গ্রুপ থেকে সেরা চারে যেতে হলে আফগানদের হারানোই শুধু যথেষ্ট নয়, অনেক বড় ব্যবধানে জয়ও ভীষণ জরুরি এখন। দ্রুত অলআউট হয়ে এবং শ্রীলঙ্কার ৩৯ ওভারে পাওয়া জয়ে রান রেটের অবস্থাও খুবই নাজুক বাংলাদেশের। গ্রুপের তিন দলই একটি করে ম্যাচ জিতলে এবং পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে পরের পর্বে যাওয়ার টিকিট হয়ে উঠবে রানরেট। সেখানে এশিয়া কাপের শুরুতেই বেশ পিছিয়ে যাওয়ায় সেরা চারও অনিশ্চিত।
নাজমুল হোসেন শান্ত জানালেন, সেই অনিশ্চয়তার কথা তাঁরা ভাবতে চান আফগানদের হারানোর পরই, ‘পরের ম্যাচ আমরা জেতার জন্যই খেলবো। জেতার পরে বোঝা যাবে কী সমীকরণ দাঁড়াবে বা কী হবে?
সূত্র: যুগান্তর