সাফল্যের অগ্রভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে রপ্তানি হয়েছে ২৪২.২৭ মেট্রিক টন আম। আরো কিছু রপ্তানি হবে, যা গত মৌসুমের (২০২১-২২) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত মৌসুমে রপ্তানি হয়েছিল ১৩২.৫৬ টন। এর আগে গত ২০২০-২১ মৌসুমে রপ্তানি হয় ৬৫.৫৯৭ টন ও ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬৫.৫ টন আম জেলা থেকে রপ্তানি হয়েছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় রপ্তানিকারক কৃষক রয়েছেন ৩২ জন। রপ্তানীকৃত আমের মধ্যে রয়েছে আম্রপালি, ক্ষীরশাপাতি, ফজলি, হাঁড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি-৪, ব্যানানা, বোম্বাই, লক্ষ্মণভোগ ও কহিতুর। সাধারণত যেসব দেশে আম রপ্তানি হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ড, সুইডেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই), বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক (ডিডি) ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘আসন্ন ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলা থেকে রপ্তানির পরিমাণ চলতি বছরের প্রায় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে। গত মৌসুম থেকে জেলার রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারী কৃষকদের মধ্যে রপ্তানি বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। নতুন নতুন বাগানের মালিকরা এগিয়ে আসছেন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন ও রপ্তানিতে। সরকারও এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত ক্রমাগত বাড়াচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজ চালু হওয়াসহ আধুনিক কিছু সুযোগ বেড়েছে চাষিদের জন্য।’
জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে চার জাতের আম
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের (ফজলির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদনকারী) সাধারণ সম্পাদক মুনজের মানিক বলেন, ‘দেশে ১৭টি পণ্য এ পর্যন্ত জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয় (পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর) থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে চারটি পণ্যই আম। এ চার জাতের আমই চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম স্বীকৃতি পায় ক্ষীরাশাপাতি। এরপর যথাক্রমে ফজলি, ল্যাংড়া ও আশ্বিনা জাতের স্বীকৃতি মেলে। এখন শুধু আম দিয়েই একক জেলা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সর্বোচ্চ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু জেলায় নয়, দেশেই আমের উৎপাদন বাড়ছে। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি খরচ বেশি। এ ছাড়া রপ্তানির জন্য হট ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন জরুরি। এতে আম বিশুদ্ধ করে রপ্তানি উপযোগী করা যায়। আমের জন্য প্রয়োজনীয় কার্গো বিমান নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে প্যাকেজিং সুবিধা (সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউস) স্থাপন জরুরি।’
‘ক্রপ জোনিং’য়ে গুরুত্ব দিতে হবে
মুনজের মানিক বলেন, ‘পাশের দেশ ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিশ্বে রপ্তানি বাজার বড় হলেও তা দখল হয়ে আছে। সেখানে অবস্থান সৃষ্টি করতে হলে শুধু আম নয়, আমের প্রক্রিয়াজাত পণ্যও রপ্তানি করতে হবে। এ ছাড়া ‘ক্রপ জোন’ করতে হবে। অর্থাৎ দেশের যে অঞ্চলে যে ফসল বেশি হয়, সে অঞ্চলে সেই ফসলের চাষে গুরুত্ব দিতে হবে।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) আওতাধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (পুরনো আম গবেষণা কেন্দ্র) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিএসও) ড. মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘নতুন আমের জাত উৎপাদনে কাজ চলছে। কৃষকদের রপ্তানি উপযোগী আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বারি উৎপাদিত ৪ ও ৩ নম্বর জাতটি বিদেশে যাচ্ছে। লেট ভ্যারাইটির গৌড়মতি যে আমটি রপ্তানি হয়, তা মূলত বারি-১২ জাত। বারি-১৩, ১৪ ও ৭ জাত তিনটি রঙিন। রঙিন জাতের আমের বিদেশে চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে বারি-১৩ জাতের চারা কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এটির রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: কালেরকন্ঠ