চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

শ্রীকৃঞ্চের জন্মতিথিতে সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা হাজারো ভক্তের সমাগম ঘটে। শ্রীকৃষ্ণের রথ, রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি, কংসের জেলখানাসহ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের নানা অংশের আদলে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ভক্তরা। জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর আন্দরকিল্লার মোড় থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ও উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা কারা ? বাঙ্গালি। সেটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। সে জন্য মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আমরা এই দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমরা যারা এই স্বাধীন বাংলাদেশে নাগরিক আছি আমরা যে যে ধর্মের অনুসারী হই না কেন, আমাদের মনন ও মস্তিষ্কের মধ্যে আমরা যদি নিজেদের মানুষ মনে করি তাহলে অন্য ধর্মের প্রতি যে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ, সেটা প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের বিঘœতা পরিলক্ষিত হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসুন ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জম্মদিনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে, বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে এই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধর্মের অনুসারীর জন্য নিরাপদ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে সেই দেশ পরিচালনা করছেন, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করি।’
‘আমি সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং আমৃত্যু থাকব। আমরা সত্যিকারের একটি অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ, আমাদের সংবিধান যেটা নিশ্চিত করেছে, প্রত্যেকটি মানুষের ধর্মীয় যে স্বাধীনতা এবং অধিকার সেটা প্রতিষ্ঠিত ও রক্ষার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করে সেটা আমরা বাস্তবায়িত করব।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘আনন্দ শোভাযাত্রায় সবাই সামিল হতে এসেছি। নির্ধারিত সময়ে শুরু করে শেষ করলে নগরীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। যেকোনো ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বিধান আমাদের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি সভাপতি সুকুমার চৌধুরী। বক্তব্য দেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারি, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, নীলু নাগ ও রুমকি সেন গুপ্ত।
উদ্বোধন শেষে শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি লালদিঘী পাড়, কোতোয়ালী, নিউমার্কেট, আমতল, নন্দনকানন, চেরাগী পাহাড় হয়ে আবার আন্দকিল্লায় গিয়ে শেষ হয়। এতে শ্রীকৃঞ্চসহ বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে অংশ নেন নারী, পুরুষ ও শিশু। ঢোলবাদ্য বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে তারা এসময় আনন্দ প্রকাশ করেন।
এদিন দুপরে নগরীর জেএম সেন হলে মাতৃসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন। বিকেলে সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

 

সর্বশেষ