হালাল বিনিয়োগের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ

খুলনায় নামসর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠান ও সমিতি নানা কৌশলে সরলপ্রাণ মানুষের কষ্টের টাকা আত্মসাৎ করছে। সুদবিহীন হালাল বিনিয়োগের কথা বলে জনগণের পকেট থেকে প্রায় ছয় কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারি দপ্তরগুলোকে ম্যানেজ করেই এমন প্রতারণা চলছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি ওয়েবসাইটে থাকা একটি নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত জানতে চাই। আমাকে বিনিয়োগ করতে বলা হয়। এভাবে অসংখ্য মানুষের কাছে মেসেজ এসেছে। আমি জেনে-বুঝে দেখলাম এটি প্রতারণার ফাঁদ। তাহলে যারা সচেতন নয়, তারা তো টাকা দেবে অনায়াসে। দুদিন পর এই টাকা নিয়ে চক্রটি পালিয়ে যাবে। এসব মেসেজ প্রশাসন কেন চোখে দেখে না।’

এমন তথ্য পেয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ওই অফিসে গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে প্রায় দুই-আড়াই কিলোমিটার ভেতরে রাস্তার পাশে একটি টিনশেড ঘরে অফিস করা হয়েছে। তিনটি কম্পিউটার নিয়ে বসে আছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক মুজাহিদুল ইসলাম। পেছনের দেওয়ালে টিন, ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্সের কপিগুলো টানানো। পাশের একটি কক্ষে বেশকিছু কৃষি যন্ত্রপাতি রাখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মিনি ট্রাক্টর, ঘাস ও ধান কাটার মেশিন উল্লেখযোগ্য। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন মানুষ। ইতোমধ্যে প্রায় দুই কোটি টাকা মাঠ থেকে উঠিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

টাকা নেওয়ার এমন কৌশলের বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সেক্টরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রি করি। চায়না থেকে এগুলো আমদানি করা হয়। জনগণের কাছে বিক্রি করি। আমাদের মূলধন ক্যাপাসিটি কম। তাই জনগণের কাছ থেকে বিনিয়োগ আশা করছি। আমদানি করা পণ্য বিক্রিতে আমাদের ৪০/৫০ শতাংশ লাভ হয়। এর মধ্য থেকে ২০/২৫ শতাংশ লভ্যাংশ আমরা বিনিয়োগকারীদের দিলে তো আমাদের ক্ষতি নেই।’

এভাবে শেয়ার নেওয়ার বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে মানুষ চাইলে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। অবৈধতার কিছু নেই। আমরা তো চুপিসারে করছি না। প্রকাশ্যে করছি, তাহলে অসুবিধা কোথায়।’

এ বিষয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলার এসি ল্যান্ড ও নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘এমনভাবে টাকা নেওয়ার বৈধতা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। সত্যি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খুলনা জেলা প্রশাসনের এনডিসি রূপায়ণ দেব বলেন, ‘ব্যক্তিগত ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে জনগণের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এদিকে তিন মাসে খুলনা থেকে এমন নামসর্বস্ব আরও দুটি প্রতিষ্ঠান কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। নগরীর নিরালা নাজিরঘাট এলাকায় জনসেবা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামে সংগঠন পরিচালনা করতেন মাসুদ ইয়াদ। তিনি বুধবার সমিতির সব আসবাবপত্রসহ প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। এ সমিতির গ্রাহক প্রায় ৭শ। তারা খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এছাড়া নগরীর পিটিআই মোড়ে অবস্থিত স্যাংগুইন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান আহসাবুর রহমান প্রায় তিন কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। ওই সমিতির অন্তত দেড় হাজার গ্রাহক এখন থানায় দ্বারস্থ হয়েছেন টাকা ফেরত পেতে।

সমিতির ব্যবস্থাপক ও মাঠকর্মী আবু ছাত্তার সানা বলেন, স্যাংগুইন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিটি সমবায় দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া। সমিতিটির চেয়ারম্যান শেখ আহসাবুর রহমান। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে শেখ মেহেদী হাসান। ফিক্সড ডিপোজিট করার অনুমোদন না থাকলেও চেয়ারম্যান নিজে অবৈধভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বেশি মুনাফা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা জমা রাখতেন।

এভাবে সমিতির নামে অর্থ আদায়ের বিষয়ে খুলনা জেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের কোনো নিবন্ধন নেই। কেউ কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবেই প্রতারণা করতে মাঠে নামে। এজন্য সবার সচেতন হওয়া জরুরি।

সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ