শোকের মাসে ইবি ছাত্রলীগকর্মীদের সংঘর্ষ, ছুরিকাঘাত

শোকের মাসে ইবি ছাত্রলীগকর্মীদের সংঘর্ষ, ছুরিকাঘাত

ইবি প্রতিনিধি-

শোকদিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা শেষে দফায় দফায় মারামারিতে জড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। এতে দুইজন গুরুত্বরসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ক্যাম্পাসের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আহত শিক্ষার্থীদের বিশ^বিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু পরিষদের আয়োজিত আলোচনা সভা শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ.কা.ম সরওয়ার জাহান বাদশা এবং প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। দুপুর আড়াইটার দিকে সেই অনুষ্ঠান শেষে মিলনায়তন থেকে তারা বেরিয়ে যান অতিথিরা। এরপরই ছাত্রলীগকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, আলোচনা সভার শুরুতে মিলনায়তনে ঢুকতে গিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী শামীম রেজা ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থী ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশিক কোরেশির মধ্যে। পরে এ ঘটনার জেরে আলোচনা সভা শেষে মিলনায়তনের বাহিরে এসে ফের উভয়ের মাঝে কথা-কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে জিয়াউর রহমান হল ও শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনার একপর্যায়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আকিবের ছুরিকাঘাতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই বর্ষের মুফতাইন আহমেদ সাবিক আহত হন। এরই রেশ ধরে কয়েকদফায় চতুর্মূখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগকর্মীরা। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। জড়িয়ে যায় লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মীরাও। এই সংঘর্ষে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী আলাল ইবনে জয় মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন বলেও জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হলে থাকেন।

এদিকে শুরুতে ছুরিকাঘাতের বিষয়টি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করলেও সাবিক ছুরিকাঘাতের বিষয়টি গোপন করেছেন। সাবিক বলেন, কিছু সংখ্যক ছেলেরা মারামারি করতেছিলো। এসময় আমি তাদেরকে ঠেকাতে গিয়ে আম গাছের ডাল লেগে কেটে গেছে। আমি এর বেশি আর বলতে চাচ্ছি না।

এদিকে আকিব ছুরিকাঘাতের বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবি করে নিজেও মারধরের শিকার হয়েছন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আলোচনা সভা শেষে বাহিরে দেখি হুলুস্থুল অবস্থা বিরাজ করছে। পরে রাসেল হলের ছেলেরা আমাকেও মারধর করে আমার হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওইসময় আমার জামা কাপড়ও ছিড়ে ফেলা হয়। এসময় তিনি ছুরিকাঘাতের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন।

আশিক কুরাইশি বলেন, প্রোগ্রামের আগে জিয়া হল নিয়ম বহির্ভূতভাবে অডিটেরিয়োমে ঢুকে পড়ে। আমি মানা করায় শামিম ভাই আমাকে বলে, আমি তোমাকে দেখে নিবো, চোখ দুইটা তুলে নিব। প্রোগ্রাম শেষে সবাইকে নামিয়ে দিতে গেলাম। আমি ওই ভাইদের বললাম, আপনারাও নামেন। তখন তাদের কয়েকজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে নামায়। তারা আমার উপর অতর্কিত হামলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আকিব ছুরি দিয়ে মারার চেষ্টা করে। তখন ওই ছুরি সাবিকের গিয়ে লাগে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, মারামারির ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী প্রক্টরদের ঘটনাস্থল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেছি। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছে প্রক্টরিয়াল বডি।

শাখা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি বলেন, এরকম একটা প্রোগ্রামের ভেতর একজন ছাত্রলীগ কর্মী ছুড়ি নিয়ে কীভাবে ঢোকে? ঘটনাটি পুর্বপরিকল্পিতও হতে পারে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রোগ্রাম পন্ড করার জন্য এমনটা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারা এসব ছেলেদের ইন্ধন দিচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনাসভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এরপরে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত এবং খুবই দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি নিয়ে বসবো। খোঁজখবর নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ