স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই দিক দিয়ে প্রমাণিত যে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু জেঁকে বসেছে।একটি হলো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, যা ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে বেশি। অন্যটি হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্য।তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যে ডেঙ্গু বেড়েছে সেটি আমাদের অনেক কষ্ট দেবে। আমরা ঢাকায় কিছু করতে পারলাম না, এখন ঢাকার বাইরে ১৫ কোটি মানুষ আছে, তারা এই ঝুঁকির মধ্যে ঢুকে পড়েছে।বলা যায়, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর তাদের এ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ১০টি বাড়িতে জরিপ করে সাতটি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি।জরিপে এই ইউনিয়নের গড় বিআই ৮০ শতাংশ।দুমকীর আংগারিয়ায় ৭০ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
যশোর পৌর এলাকায় ৫৫ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
যশোরের পৌর এলাকায় দুই দিনে ২০টি বাড়িতে জরিপ করে ১১টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানেও ৫৫ শতাংশ বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি। জরিপে এই পৌর এলাকার গড় বিআই ৮০ শতাংশ।
রাঙামাটি পৌর এলাকায় ২২ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা রাঙামাটি পৌর এলাকায় দুই দিনে ১০০টি বাড়িতে জরিপ করে ২২টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ২২ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার। পৌর এলাকার গড় বিআই ৩৫ শতাংশ।
গাজীপুর সিটিতে ১৪.২৮ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
গত ২৩ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত গাজীপুর সিটির ৪১টি ওয়ার্ডের এক হাজার ৫০টি বাড়িতে গিয়ে জরিপ করেন জরিপকর্মীরা। এর মধ্যে ১৫০টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে এডিস মশার দুটি ধরন এজিপ্টি ২৩.৬ শতাংশ ও এলবোপিটাস ৭৬.৪ শতাংশ। জরিপে ২৪টি ওয়ার্ডের বিআই ২০ বা এর বেশি। ১৪টিতে ১০ থেকে ১৯-এর মধ্যে। বাকি তিনটিতে ১০-এর নিচে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, এটির বিআই ৮৭। বিআই ৩০-এর বেশি পাওয়া গেছে ৪৭, ৫০, ৫৪, ৩৮, ২৯, ২৪, ১৬ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
নারায়ণগঞ্জে ১৩ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ডের ৭০৫টি বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৯৫টি বাড়িতে। অর্থাৎ ১৩.৪৭ শতাংশ বাড়িতে এডিস মর্শার লার্ভা পাওয়া গেছে। এখানে এজিপ্টি ৫৮.৪ শতাংশ, এলবোপিটাস ৪১.৬ শতাংশ। ৩০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত এই জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জরিপে দেখা গেছে, ১১টি ওয়ার্ডের বিআই ২০ বা এর বেশি। সাতটিতে ১০ থেকে ১৯-এর মধ্যে। বাকি ৯টিতে ১০-এর নিচে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, এটির বিআই ১১৩। বিআই ৩০-এর বেশি ২৪, ১৩, ২৭, ১৯, ২০, ২৩, ৫ ও ৪ ওয়ার্ডে।
রাজশাহী সিটিতে ৩৭.৩ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
রাজশাহী সিটিতে পাঁচটি ওয়ার্ডের ৭৫টি বাড়িতে জরিপ করে ২৮টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে এজিপ্টি ২০ শতাংশ, এলবোপিটাস ৮০ শতাংশ। সিটির গড় বিআই ৪৬.৬৭ শতাংশ। গত ৫ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত এ জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম সিটিতে ৩০.৩ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
চট্টগ্রাম সিটিতে ২১টি ওয়ার্ডের ৩২০টি বাড়িতে জরিপ করে ৯৭টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে এজিপ্টি ৭৫%, এলবোপিটাস ২৫%। সিটির গড় বিআই ৪৬.৬ শতাংশ। ৫ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সিলেট সিটিতে ৪০ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা
সিলেট সিটিতে ২৭০টি বাড়িতে জরিপ করে ১০৭টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে এজিপ্টি ৭৪.৪ শতাংশ, এলবোপিটাস ২৫.৬ শতাংশ। গড় বিআই ৪০ শতাংশ। ৫ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মো. খলিলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের অনেক বাড়িতে সুপেয় পানির অভাব আছে। এ কারণে বেশির ভাগ বাড়িতে পানি জমিয়ে রাখতে দেখা গেছে। প্লাস্টিকের বালতি, ড্রাম, মাটির পাত্রসহ বিভিন্ন জিনিসে পানি জমিয়ে রাখা হয়েছে, যেখানে মূলত এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, দুই নগরে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে একক বাড়ি বা দুই-তিন তলা বাড়িগুলোতে। যেগুলোর সামনে উঠান বা ফাঁকা জায়গা রয়েছে।
ভর্তি রোগীর ৬০ শতাংশই ঢাকার বাইরের
দেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ২৮৮ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৮৯৯, ঢাকার বাইরে এক হাজার ৩৮৯ জন। অর্থাৎ এক দিনে ভর্তি রোগীর ৬০ শতাংশই ঢাকার বাইরের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির এ তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে আট হাজার ৬৬১ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকার তিন হাজার ৮০৪ জন এবং ঢাকার বাইরের চার হাজার ৮৫৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি আগস্টে ৪২ হাজার ৪৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৯৩ জনের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৪ হাজার ৩১২। মৃত্যু হয়েছে ৪৪৪ জনের।
সূত্র: কালেরকন্ঠ