নিত্যপণ্যের দাম কমছেই না

দুই বছর আগে ঠিক আজকের দিনে বাজারে এক কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। গতকাল রোববার সেই একই আটা বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। হিসাবটি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)।

আটার মতো চাল, ডাল, তেল, চিনি, আদা, রসুন, ডিম, মাছ, গরুর মাংস ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম যেন মগডালে উঠেছে। দৈনন্দিন দামে কিছুটা হেরফের হয়। কিছুটা কমে, কিছুটা বাড়ে। কিন্তু বাজার আগের দামে যাচ্ছে না। এমনকি আগের দরের কাছাকাছি দামেও কিনতে পারছেন না ক্রেতারা।

কারণ যেটাই হোক, দিন শেষে মানুষকে উচ্চ মূল্যে এসব নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ এতে চাপে পড়েছে। কারণ, মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বাড়ছে কম হারে।

এই হিসাবে বিশ্ববাজারে সর্বোচ্চ দামের তুলনায় সয়াবিন তেলের দর ৪৫ শতাংশ কমেছে। দেশের বাজারে গত বছরের জুনে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ২০৫ টাকায় ওঠে। এখন তা সরকারিভাবে নির্ধারিত আছে ১৯৯ টাকা লিটার। কমেছে ৩ শতাংশ। ভোজ্যতেলের দাম বিশ্ববাজার অনুযায়ী না কমার কারণ হিসেবে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও মূল্য সংযোজন করে (মূসক/ভ্যাট) ছাড় উঠে যাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

কারণ যেটাই হোক, দিন শেষে মানুষকে উচ্চ মূল্যে এসব নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষ এতে চাপে পড়েছে। কারণ, মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বাড়ছে কম হারে।

রসুনের কেজি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে আদার দাম চড়া। দেশি আদা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা এবং চীনা আদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি চাইছেন বিক্রেতারা।

আমিরুন বলেন, বছর দেড়েক আগেও সংসার ভালোভাবেই চলত। এখন স্বাচ্ছন্দ্য নেই; বরং কোনো কোনো মাসে ঋণ করতে হয়। তাঁর স্বামীর বেতন কিছুটা বেড়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সংসারের ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি।

দুই বছর আগের আজকের দিনের টিসিবির বাজারদরের তালিকা এবং গতকালের তালিকা মিলিয়ে দেখা যায়, মোটা ও মাঝারি চালের দাম মোটামুটি একই আছে। তবে সরু চালের দাম অনেকটা বেশি এখন। সরু চালের সর্বোচ্চ দর ছিল ৬২ টাকা, যা এখন ৭৫ টাকা। বড় দানার মসুর ডাল ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। এখন তা ৯০ থেকে ১০০ টাকা। চিনির কেজি ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, যা এখন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আলু কেনা যেত ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি। এখন কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে, ৩৫-৪০ টাকায়। ডিমের হালি ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। তা এখন ৪৭ থেকে ৫০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। গতকাল সেই একই মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা কেজি। মাছ, গরুর মাংস, ডিম, দুধ—প্রায় সব ক্ষেত্রে চিত্রটি একই রকম।

বছর দেড়েক আগেও সংসার ভালোভাবেই চলত। এখন স্বাচ্ছন্দ্য নেই; বরং কোনো কোনো মাসে ঋণ করতে হয়।

আমিরুন নেছা , গৃহিণী

এখন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মালিবাগ, কাঁঠালবাগান ও শ্যামলী বাজার ঘুরে গত দুই দিনে দেখা গেছে, এখন বেশি বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। অন্যান্য পণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল হয়েছে, অর্থাৎ মগডালে চড়ে বসে আছে।

বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। মাসখানেক আগেও এই পেঁয়াজ ৪০ টাকার আশপাশে বিক্রি হতো।

রাজধানীর শ্যামলীতে ফুটপাতে জুতা বিক্রি করেন জাহিদুল ইসলাম। সংসারের টানাটানিতে তাঁর স্ত্রীকে গৃহকর্মীর কাজ নিতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম শুধু বাড়ছে। গত এক বছরে শুনিনি কোনো জিনিসের দাম কমেছে।’

 

সর্বশেষ