বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮.৮০ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকে আলোচিত সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে আছে ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫.৯৬ শতাংশ। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে তিন হাজার ৪১ কোটি টাকা বা ৪.৯০ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২.৮০ শতাংশ বা চার হাজার ৭৩২ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক রকমের। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ডলার সংকটে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। করোনার সময় দেওয়া ঋণগুলোও সময়মতো পরিশোধ না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে, সেটাও খেলাপি ঋণ বাড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
২০২০ সালে করোনার প্রভাব মোকাবেলা ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয়। ২০২১ সালে বলা হয়, একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা কেউ তার মাত্র ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি হবেন না। ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কিস্তির ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। পরে অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই হার কমিয়ে ৫০ শতাংশ করে। এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়েছিল, তা নিরীক্ষিত ছিল না। তাই পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কয়েকটি ব্যাংককে ঋণখেলাপি করে দেওয়া হয়। আবার কিছু ব্যাংক ঋণখেলাপি করার উপযুক্ত হলেও তা নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ না কমে বরং দিন দিন বাড়ার অন্যতম কারণ হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।’ তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব (এমডি) ও ব্যবস্থাপনায় যাঁরা আছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো এবং করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
সূত্র: যুগান্তর