সপরিবারে বঙ্গভবনে উঠলেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর সপরিবারে বঙ্গভবনে উঠেছেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আজ অফিস করেছেন এবং কয়েকটি ফাইলে স্বাক্ষরও করেন।

বঙ্গভবন সূত্র জানায়, সকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি তাঁর গুলশানের বাসভবনে যান। রাষ্ট্রপতি তাঁর সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা এবং পুত্র আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে মোটরগাড়ি শোভাযাত্রা সহকারে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে বঙ্গভবনে আসেন।

রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গভবনে পৌঁছুলে পুলিশের সুসজ্জিত একটি অশ্বারোহী দল বঙ্গভবনের বাইরের মেইন গেটে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে মূল ফটকে নিয়ে আসেন। মূল ফটকে পৌঁছলে বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খানসহ উচ্চতম সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতিকে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটায় পিজিআর গার্ড অনার দেবে। বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে রাষ্ট্রপতি জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তপক অর্পণ করবেন। তিনি সেখানে একটি পরিদর্শক বইয়েও স্বাক্ষর করবেন।

এরপরে রাষ্ট্রপতি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে মোটরশোভাযাত্রা সহযোগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন এবং ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ পাঠ করান। এদিন দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদকে রাজসিক বিদায় জানানো হয়। সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রপতি রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় উঠেছেন।

রাষ্ট্রের এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাবেন মো. সাহাবুদ্দিন। শুধু তিনিই নন, তার পুরো পরিবারের জন্যও থাকছে নানা সুযোগ সুবিধা।

নিরাপত্তার পাশাপাশি বেতন ভাতা, দেশে-বিদেশে বিনামূল্যে চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশ ভ্রমণের মতো সুযোগ যেমন পাবেন, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করারও অধিকার দিয়েছে সংবিধান।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম চুপ্পু। তার পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা।

১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

সাহাবুদ্দিন ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।

মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তার অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে।

কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাবেক এ ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন।

সর্বশেষ