মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশটির জাতিগত বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে নতুন করে ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে দেশটির বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাচ্ছেন। থাইল্যান্ডের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যে বিদ্রোহীরা সামরিক বাহিনীর সীমান্তরক্ষীদের একটি চৌকিতে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী, তারপর থেকে দেশটির বিশাল একটি অংশ জুড়ে সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে পড়ে সামরিক সরকার। পাশাপাশি ভিন্নমতাবলম্বী ও গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী দমনাভিযান চালিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়ে তারা।
থাইল্যান্ডের কর্মকর্তাদের ও একজন ত্রাণ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, নারী ও শিশুসহ প্রায় পাঁচ হাজার মিয়ানমারবাসী সীমান্ত পার হয়ে থাইল্যান্ডের টাক প্রদেশে ঢুকে পড়েছে, তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি করে দেয়া অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ত্রাণকর্মী জানান, গতকাল থেকে বহু লোক সীমান্ত অতিক্রম করেছে আর কিছু লোক সীমান্ত পার হওয়ার জন্য এখনো মিয়ানমারের পাশেই অপেক্ষা করছেন। তাদের কাছে পান করার মতো পর্যাপ্ত পানি নেই, এখন পর্যন্ত ব্যবহার করার মতো কোনো পায়খানাও নেই। থাইল্যান্ড জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ‘থাই আকাশসীমার লঙ্ঘন ঘটলে টহল ফ্লাইট পাঠানোর জন্য প্রস্তুত আছে’।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টাকের প্রাদেশিক সরকার বলেছে, টাক প্রদেশে থাকা থাই-মিয়ানমার সীমান্ত কমান্ড সেন্টার মিয়ানমারের লড়াই থেকে বাঁচতে যারা পালিয়ে এসেছেন, তাদের সবাইকে মানবিক নীতি অনুসারে সুরক্ষা ও সহায়তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফোন করা হলেও মিয়ানমারের জান্তার এক মুখপাত্র জবাব দেননি বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের বহু গ্রামীণ এলাকায় সরকারি বাহিনীগুলোর সঙ্গে বিদ্রোহীদের তীব্র লড়াই হচ্ছে। দেশটির সামরিক বাহিনী বেসামরিকদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে বলে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অভিযোগ করেছে।
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি গ্রামে চালানো বিমান হামলায় শিশুসহ অন্ততপক্ষে আট বেসামরিক নিহত হয়। বেসামরিকদের লক্ষ্যস্থল করার কথা প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে লড়াই করছে।