ঘন ঘন মুরগির দাম পরিবর্তন, অস্বস্তিতে ভোক্তারা

ঘন ঘন মুরগির দাম পরিবর্তন, অস্বস্তিতে ভোক্তারা
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনবার মুরগির দাম ওঠানামা করেছে। ঘন ঘন মুরগির দাম পরিবর্তন হওয়ায় অস্বস্তিতে আছে ভোক্তারা। গত শুক্র ও শনিবার খুচরা বাজারে দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০-২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৫০-৩৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এক দিন পর রবিবার দাম কমে ব্রয়লার কেজি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৪০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আবার দাম কিছুটা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০-২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩৫০-৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে এখন নিয়মিতই মুরগির দাম ওঠানামা করছে। ফলে খুচরা বাজারেও মুরগির দাম ওঠানামা করছে। গতকাল কারওয়ান বাজার, রামপুরা কাঁচাবাজার ও মিরপুর লালমাটিয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রামপুরা কাঁচাবাজারে খুচরা ব্যবসায়ী জিহাদ ব্রয়লার হাউসের বায়োজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) দাম নতুন করে কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩৭০ টাকায় বিক্রি করছি। দুই দিন আগে মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কম ছিল।’

কারওয়ান বাজারের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুরগির বাজার গত সপ্তাহে অন্তত তিনবার ওঠানামা করেছে। আজ (গতকাল) ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০-২১০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত শুক্রবার ও শনিবার দাম বেড়ে বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২২০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজি ৩৬০ টাকা।’

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে পাইকারি দরে মুরগি সরবরাহ করেন মশিউর রহমান চঞ্চল। মুরগির দাম ওঠানামার বিষয়টি স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে মুরগির চাহিদা বাড়লে পোলট্রি কম্পানিগুলো মুরগির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, আবার চাহিদা কমে গেলে দর কমিয়ে দিচ্ছে। এসব কারণেই বাজারে এখন ঘন ঘন মুরগির দাম পরিবর্তন হচ্ছে। পাইকারিতে এখন ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৮৫ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পবিত্র রমজান মাস শুরুর দুই দিন আগে রেকর্ড দাম বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৭০ টাকায় ও সোনালি মুরগির কেজি ৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এর পর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এবং এফবিসিসিআই সরকারকে মুরগি আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দিলে বৃহৎ খামারিরা দাম কমিয়ে মুরগি বিক্রি শুরু করেন। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় দাঁড়ায়। একই সঙ্গে সোনালি মুরগির দাম কমে কেজি ৩৪০ টাকায় নেমে আসে। এই দাম এক সপ্তাহও স্থায়ী হয়নি। ফের মুরগির দাম ওঠানামা করছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আশা করছি খুব দ্রুতই মুরগির বাজার আগের মতো স্থায়ী হবে। স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত মুরগির বাজার কিছুটা ওঠানামা করবেই। তবে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ টাকার মধ্যে থাকাটা ভালো। আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে ২২০ টাকার বেশি না উঠতে পারে।’

এক সপ্তাহে তিনবার মুরগির দাম পরিবর্তন হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহেল রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম ঘন ঘন ওঠানামা করলে এর সুযোগ নেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারে দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়লে খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করেন। আর যখন দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমে যায় তখন কেজিতে পাঁচ টাকা কমিয়ে বিক্রি করেন।’

পরিবর্তন আসেনি

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল, ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামে পরিবর্তন আসেনি। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা, দেশি রসুন কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি আদা কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ছোলা কেজি ৯০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) কেজি ১৪০ টাকা, বড় মসুর ডাল কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিনি কেজি ১১৫-১২০ টাকা, পোলাউ চাল (খোলা) কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও প্যাকেটজাত কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

দাম আরো কমেছে

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ইফতারি তৈরির উপকরণ লেবু, বেগুন, শসাসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম আরো কমেছে। দাম কমে বড় আকারের লেবুর হালি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লেবুর হালি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে প্রথম রোজার দিন বড় আকারের লেবুর হালি ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। একইভাবে কমেছে শসা ও বেগুনের দাম। দেশি শসা কেজি ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা কেজি ৪০-৫০ টাকা, বেগুন কেজি ৬০-৭০ টাকা, টমেটো কেজি ৪০-৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ কেজি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র: কালেরকন্ঠ

সর্বশেষ