আওয়ামী লীগের ২৫ কেন্দ্রীয় নেতা হতে চাচ্ছেন সংসদ সদস্য
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০ কেন্দ্রীয় নেতা। নির্বাচনের প্রায় আট মাস বাকি থাকলেও মনোনয়নপ্রত্যাশী এই নেতাদের অনেকেই মাঠে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জনের মনোনয়ন পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনার কথা দলের ভেতরে আলোচনা রয়েছে।আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। ফলে কমিটির বিভিন্ন পদে ৭৮ জন নেতা রয়েছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনসহ সংসদ সদস্য আছেন ২৬ জন। বাকি ৫২ জন সংসদ সদস্য নন। সংসদের বাইরে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন। এই ২৫ জনের মধ্যে আটজন সাবেক সংসদ সদস্য।
আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ রয়েছে চারটি। এই চার পদে থাকা নেতাদের মধ্যে একমাত্র আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংসদ সদস্য নন। তবে তিনি বিগত সংসদে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন আশা করছেন।দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ আটটি। এই পদে থাকাদের মধ্যে বর্তমানে দুজন সংসদ সদস্য, বাকি ছয়জন সংসদে নেই। এই ছয়জনের মধ্যে বি এম মোজাম্মেল হক ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। অন্য পাঁচজন এখনো সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পাননি। তাঁরা হলেন আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সুজিত রায় নন্দী। সংসদের বাইরে থাকা ছয় সাংগঠনিক সম্পাদকই এবার দলের মনোনয়ন চান।আহমদ হোসেন নেত্রকোনা-৫, বি এম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুর-১, এস এম কামাল হোসেন খুলনা-৩, আফজাল হোসেন পটুয়াখালী-১, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল মৌলভীবাজার-২, সুজিত রায় নন্দী চাঁদপুর-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

বি এম মোজাম্মেল হক নবম ও দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে পাঁচবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি মোজাম্মেল হক। এবার তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।আওয়ামী লীগের টানা পাঁচবারের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি একবারও। এই নেতা নেত্রকোনা-৫ আসনে মনোনয়নের জোরালো দাবি জানাবেন।দলের টানা দুইবারের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন খুলনা-৩ (খালিশপুর) আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি ২০১৮ সালে দলের সম্মেলনে প্রথমবার সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার আগে দুই মেয়াদে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন।

সুজিত রায় নন্দী গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পরে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ছিলেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সুজিত রায় নন্দী নিয়মিত এলাকায় সাংগঠনিক কর্মসূচি ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। তিনি গত মার্চ মাসে চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০টি কর্মসূচি পালন করেন। এতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

পটুয়াখালী-১ আসনটি সদর, দুমকী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ উপজেলাগুলোতে নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন।

জানতে চাইলে আফজাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের কাজ করে মাঠ গুছিয়ে রাখছি। এলাকার মানুষের মধ্যে সাড়াও পড়েছে। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে মনোনয়ন চাইব। তিনি আমাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি ভালো ফল নিয়ে আসতে পারব।’

আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন।

নির্বাচনী মাঠে বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের সাতজন : বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক রয়েছেন ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে সংসদ সদস্য আছেন পাঁচজন। বাকি ১৩ সম্পাদকের মধ্যে সাতজন নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের মধ্যে অন্তত তিনজনের মনোনয়ন পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের মধ্যে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। এই নেতারা নিজের নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ ও মতবিনিময় করছেন।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর কুমিল্লা-১ আসনের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি সপ্তাহের দুই-তিন দিন নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে গণসংযোগ করছেন।

আবদুস সবুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি প্রতি শুক্রবার এলাকার বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছি। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাকে বিবেচনা করবেন।’

ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া, লোহাগড়া) আসনের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তিনি বিগত নির্বাচনেও আসনটিতে দলের মনোনয়নের জোরালো দাবিদার ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বরিশাল-৪ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি সম্প্রতি এলাকায় একাধিক সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁর বাবা প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদ আসনটিতে সংসদ সদস্য ছিলেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ একাধিক কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে এ আসনে মনোনয়নের জোরালো দাবিদার হবেন শাম্মী আহমেদ।তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ চার বছর ধরে চাঁদপুর-১ আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারার সুযোগে এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পেরেছেন। সেলিম মাহমুদ এবার মনোনয়ন পাবেন বলে দলের অভ্যন্তরে জোরালো আলোচনা রয়েছে।আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ঢাকার যেকোনো একটি আসনে মনোনয়ন চান। কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী নোয়াখালী অথবা লক্ষ্মীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

কার্যনির্বাহী সদস্য আরাফাত ও সানজিদাকে নিয়ে আলোচনা : কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে মোহাম্মদ এ আরাফাত ঢাকা-১৭, তারানা হালিম টাঙ্গাইল-৬, সানজিদা খানম ঢাকা-৪, আনোয়ার হোসেন মাদারীপুর-৩, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোহাম্মদ এ আরাফাত।

ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সানজিদা খানম। কিন্তু গত দুই নির্বাচনে মহাজোটের সমীকরণে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এবারে আসনটিতে মনোনয়ন পেতে জোরালোভাবে মাঠে নেমেছেন সানজিদা। তিনি আসনটির থানা ও ওয়ার্ডগুলোতে নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সে সময়ে তিনি টাঙ্গাইল-৬ আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে বিগত নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা ও সংসদ থেকে বাদ পড়ায় টাঙ্গাইলের রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তারানা হালিম এ বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর আবারও এলাকাকেন্দ্রিক যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।

সভাপতিমণ্ডলীর ছয় নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীতে বর্তমানে ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন সংসদ সদস্য। বাকি সাতজন সংসদের বাইরে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন ছাড়া ছয়জনই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

দলের একাধিক সূত্র জানায়, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান আবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনও সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান।

সূত্র: কালেরকন্ঠ

সর্বশেষ