গ্রেফতারের সময় পুলিশের কাছে কোনো ‘মানবিকতা’ পাইনি – সংবাদ সম্মেলনে, মাহিয়া মাহি

মেহেদী হাসান শাহীন, স্টাফ রিপোর্টার ; গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) বাসন থানা পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শনিবার গ্রেফতারের পর সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা কারাবাস শেষে বেরিয়ে রাতে তিনি সংবাদ সম্মেলনে ‘ভীত-সন্ত্রস্ত্র ও আতঙ্কিত’ থাকার কথা উল্লেখ করে তার স্বামীও ‘পুলিশ হয়রানি’ মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ করা ঠিক হয়নি বলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

শনিবার (১৮ মার্চ) রাতে মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফারিশতা রেস্টুরেন্টের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরও গ্রেফতারের সময় পুলিশের কাছে কোনো ‘মানবিকতা’ পাননি বলেও অভিযোগ এ চিত্রনায়িকা। এসময় মাহি আরও বলেন, লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি।

সৌদি আরব থেকে ওমরা শেষে সকালে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও জমি দখলের মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মাহিকে গ্রেফতার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এরপর দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত ঘটনায় পুলিশ বিভাগ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপারে ফেইসবুক লাইভে ‘মিথ্যা মন্তব্য’ করেছেন মাহিয়া মাহি। তিনি প্রতিপক্ষের ব্যাপারেও মন্তব্য করেছেন।
“এভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করার অধিকার রাখেন না। তার বিরুদ্ধে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে। তার প্রতিপক্ষের লোকজন জমি সংক্রান্ত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি সংক্রান্ত মামলা করেছেন।”

পরে দুপুর দেড়টার দিকে মাহিকে গাজীপুরের আদালতে তোলা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম মো. ইকবাল হোসেন। তবে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অন্তঃস্বত্ত্বা এই চিত্রনায়িকার জামিনের আদেশ দেন একই বিচারক। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

একদিন আগেই মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।
পাশাপাশি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আরেকটি মামলা করেন মাহির স্বামী রকিবের প্রতিপক্ষরা।

গাজীপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রকিব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। রকিবকে বিয়ে করার পর রাজনীতিতে নামা মাহি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন তিনি।
শুক্রবার ভোরে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পাশে রকিবের গাড়ির বিক্রয় কেন্দ্র সনিরাজ কার প্যালেসে ভাংচুর হয়েছিল। ওই জমি নিয়ে রকিবের সঙ্গে স্থানীয় আরেক পক্ষের বিরোধ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে থাকা মাহি ও রকিব ওই ঘটনার পর ফেইসবুকে লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগও আনেন তারা। পরে শনিবার সকালে দেশে ফিরলে মাহিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর কারাগার থেকে বেরিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসে মাহি পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে কথা বলব, উনার কাছে আমার আইজীবীরা যাবেন, কথা বলবেন। তারাই ওই টাকার সত্যতা বের করবেন। আমি লাইভে টাকা নেওয়ার কথা বলে ভুল করেছি।
“যেহেতু পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করেন। আমার লাইভে তার টাকা নেওয়ার কথা বলাটা পুরো বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছে হয়ত। আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করছি।”

তবে এ বিষয়ে তদন্ত দাবি করে মাহি বলেন, “কিন্তু আমি যে কথাটা বলেছি, দেড় কোটি টাকার কথাটা বলেছি. সেটা নিয়েও তদন্ত হোক, নিশ্চয়ই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি হচ্ছেন ন্যায়বিচারের পক্ষে, সে যেই হোক না কেন, কমিশনার হোক, আর যেই হোক না কেন। আমি যদি অন্যায় করে থাকি আমাকে শাস্তি দেবে, আমি সেই শাস্তি মাথা পেতে নেব। আমি যেটা বলেছি, লাইভে গিয়ে ওইসব কথা বলে ভুল করেছি। আমি সেটার জন্য দেশবাসীর কাছে সরি।”
তারপর তিনি আতঙ্কিত থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমার কথা হচ্ছে, আমি খুবই আতঙ্কিত। আমাকে আজকে যেভাবে পুলিশ ট্রিট করেছে, আমার স্বামী দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আরও টর্চার করবে। আমাদের পুরো সরকার পরিবারকে এই কমিশনার বিতর্কিত করবে। সবার মাধ্যমে আমি তা বলতে চাই। আমার স্বামী আসার পর তাকে যেন টর্চার না করা হয়, ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক।“
এর আগে জমির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার শিকার হন অভিযোগ করেন মাহি বলেন, “যখন দখল সংক্রান্ত বিষয়ে আমি জিডি করাচ্ছিলাম, পুলিশ সেই জিডি নেয়নি। সেদিনই কিন্তু প্রতিপক্ষের ইসমাইল হোসেন লাদেনদের ওই জমি দখল করার কথা ছিল। সেটি বুঝতে পেরেই আমি জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমার জিডি নেয়নি। অনেক চাপাচাপির পর সিল না মেরেই আমাকে একটি ফেইক জিডির কপি ধরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ।”

‘প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরও মানবিকতা পাইনি’
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছ থেকে কোনো ‘মানবিকতা’ পাননি উল্লেখ করে মাহি বলেন, “আমি সবকিছু নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত্র। একটা পরিচিত মুখ হওয়ার পরও আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি বার বার বলছিলাম, প্রচণ্ড গরম লাগছে, আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, আমি ঠান্ডা পানি চাচ্ছিলাম, পুলিশ আমাকে এক ঘণ্টা পরে পানি দিয়েছে। এত কিসের গোপনীয়তা? আমি তো এরকম কোনো আসামি না।

সর্বশেষ