বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। দুই মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫৭ শতাংশ দাম বেড়ে এখন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম ২৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি এখন ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। গত ২২ ডিসেম্বর ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, দুই মাসে ২২ শতাংশ দাম বেড়ে এখন তা ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আমদানি করা চীনা আদার দাম ৮৭ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশি আদার দাম। ৩০ শতাংশ দাম বেড়ে এখন তা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে খোলা চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। দেশি বলে পরিচিত চিকন মসুর ডাল কেজিতে ৮ শতাংশ দাম বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির বাজারদরের তথ্যে দেখা গেছে, আমদানি করা রসুনে গত এক বছরে ৬২ শতাংশ দাম বেড়েছে। টিসিবির বাজারদরে অবশ্য একসঙ্গে দুই মাসের তথ্য নেই। গত মাসে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৯০ টাকায়। এক বছরে দেশি রসুনের দাম ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি রসুন প্রতি কেজি এখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
গত এক বছরে আমদানি করা আদার দাম ১৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এখন তা সর্বোচ্চ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও তা ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। গত এক বছরে দেশি আদার দাম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, গত মাসে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। টিসিবির তথ্যে জানানো হয়, গত এক বছরে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এখন হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়, গত মাসে যা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো সুযোগ নেই। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে উৎপাদন খাতে এক ধরনের প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া শীতকালীন সবজির সরবরাহ কম হবে। নতুন ধান আসতে আরো তিন-চার মাস। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো কারণ দেখছি না। বরং তা বাড়তে পারে, যদি সরবরাহ চেইন ঠিক না থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আসছে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকবে। সুতরাং সরকারের উচিত, এই সময়ে সরবরাহ ঠিক রাখা। আমদানি ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা। আবার সরকার চাইলেও বেশি আমদানি করতে পারবে না। তার অন্যতম কারণ হলো ডলারের কিছুটা সংকট এখনো আছে। তবে এই সরকার চেষ্টা করছে, দেখা যাক সমানে কী হয়।’
জোয়ারসাহারা বাজারের ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম এবং সিয়াম স্টোরের ব্যবসায়ী মো. রমিজ উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাত্র কিছুদিন আগে ডিমের দাম বেড়ে ডজন ১৫০ টাকা হয়েছিল, এখন কিছুটা কমে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই মাস আগে ডিমের ডজন বিক্রি করেছি মাত্র ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। আমদানি বাড়লেও কমছে না আমদানি করা আদা ও রসুনের দাম। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ২৮০ টাকার নিচে নামছে না। তবে দেশি বলে পরিচিত কেরালা আদা প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
জোয়ারসাহারা বাজারে গতকাল এক মুদি দোকান থেকে ২৫০ গ্রাম মসুর ডাল, ২৫০ গ্রাম রসুন ও আধাকেজি পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায় এক ক্রেতাকে। তাঁর নাম মো. জুয়েল বলে জানান। তিনি পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। দৈনিক মজুরি পান ৫০০ টাকা। থাকেন নির্মীয়মাণ ভবনেই।
জুয়েল জানান, গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধা মা, দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী থাকেন। বড় মেয়ে কলেজে পড়ছে, ছোট দুই ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ছে। তাদের পেছনে মাসে তিন-চার হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ায় সংসারের খরচ অনেক বাইড়া গেছে। খরচের সঙ্গে কুলাইয়া উঠতে পারতেছি না।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, যেহেতু গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, বাজারে এর একটা প্রভাব আছে। নতুন করে এক মাসেই দুইবার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
বাজার তদারকির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান চলমান। রমজান উপলক্ষে আগামী রবিবার আমদানিকারকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়ে বড় পরিসরে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভাটি টিসিবির অডিটরিয়ামে হবে।
সূত্র: কালেরকন্ঠ