নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাত্র চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কণ্ঠস্বর প্রকাশনী এরই মধ্যে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি প্রথমবারের মতো বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পেয়েই মানসম্মত কাজের মাধ্যমে সকল লেখক ও পাঠকের নজর কেড়েছে। ইতিমধ্যে কণ্ঠস্বরের লেখক তালিকায় যুক্ত হয়েছে কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, আতিক হেলাল, এস এম মোস্তাক আলী, ডি আই জি শামীমা বেগম, ফুয়াদ স্বনমের মতো জনপ্রিয় নাম। আর তাই কণ্ঠস্বরের চেয়ারম্যান ও তরুণ প্রকাশক খান তবারক হাসান তপুর সাথে বই মেলায় হয় আলাপচারিতা –
রিপোর্টার : কেমন আছেন?
খান তবারক হাসান তপু: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
রিপোর্টার : আপনার প্রকাশক হবার পটভূমি কী?
খান তবারক হাসান তপু: সাহিত্য আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, মানুষের জীবনে যা ঘটে তা কোনো না কোনোভাবে সাহিত্যের কোনো একটা ভাগে পড়ে যায়। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া বা আত্মজীবনী আমরা অবিরত বানাচ্ছি। এইসবগুলোকে মলাটবদ্ধ করতে দরকার প্রকাশনী সংস্থা। বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে কিছুটা অবদান রাখার জন্যই আমার প্রকাশক হিসেবে যাত্রা শুরু করা। চেষ্টা করছি, সফলতা আসছে, আরও আসবে ইনশাআল্লাহ।
রিপোর্টার : আপনার প্রকাশনার নাম কণ্ঠস্বর হবার কারণ কী?
খান তবারক হাসান তপু: কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ একটা জটিল বিষয়। আনুসাঙ্গিক অনেক কিছু ভেবে নাম স্থির করতে হয়। আমরা সাহিত্য নিয়ে কাজ করব এবং জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্য নিয়ে কাজ করার সুদূর প্রসারী চিন্তা আছে। একজন লেখকরের চিন্তা ও আবেগ প্রকাশের মাধ্যম প্রধানত দুইটি কণ্ঠ এবং কলম। আমরা লেখকের কণ্ঠস্বর কে কাগজে প্রকাশ করতে চাই। এইজন্য “কণ্ঠস্বর প্রকাশনী” নাম দিয়েছি। যেহেতু জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্য নিয়ে কাজ করব তাই আমাদের ট্যাগ লাইন “জীবনের জন্য সাহিত্য”।
রিপোর্টার : এখনতো মানুষ ডিজিটাল যুগের দোহাই দিয়ে বই পড়তে বা কিনতে চায়না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
খান তবারক হাসান তপু: ডিজিটাল যুগে পাঠক কমছে, এটা সত্য, কিন্তু এই সত্যটা মেনে নেয়া যাচ্ছ না। অনলাইনে যা পড়ছেন, তা পাঠকের মনে থাকছে না। কাগজের বইয়ের যে আবেগ, সেই আবেগ অনলাইনে আসে না। বর্তমান যুগের বাবা মা যারা আছেন তারা কিন্তু ছোটো বেলায় কাগজে ছাপানো বই পড়ে বড় হয়েছেন। সেই ধারাটা ধরে রাখা দরকার।
রিপোর্টার: আপনার প্রকাশনী কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খান তবারক হাসান তপু: প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের এখন চতুর্থ বছরে আছি।
রিপোর্টার : এবারের একুশে বইমেলায় আপনারা কয়টি বই প্রকাশ করেছেন?
খান তবারক হাসান তপু: বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষ্যে ৩০টির অধিক নতুন বই প্রকাশ করছি। কয়েকটা বই এখনো ছাপাখানায় আছে, সেগুলো ২১শে ফেব্রুয়ারী তারিখ থেকে বইমেলার কণ্ঠস্বর প্রকাশনীর ৫৬১ নাম্বার স্টলে পাওয়া যাবে। আমাদের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – বাংলা একাডেমি পুরস্কার জয়ী কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার বই ‘ডায়োজেনিসের লণ্ঠন’ এবং বাংলাদেশের বিখ্যাত ছড়াকার আতিক হেলালের শিশুতোষ ছড়ার বই ‘পাখি হবো’। বাংলাদেশের প্রথম নারী এএসপি, যাকে দিয়ে শুরু পুলিশ ক্যাডারে নারীদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, ফাতেমা বেগমের আত্মজীবনী ‘আমার পুলিশ হওয়া’। এছাড়াও অনেক প্রবীণ ও নবীন লেখক। আমরা চাই ভালো লেখা প্রকাশ করতে। ভালো পাঠক তৈরি করতে। ভালো লেখাই ভালো পাঠক তৈরি করে।
রিপোর্টার : আপনি কি মনে করেন যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকাশনা শিল্পটির অবস্থা কোন পর্যায়ে?
খান তবারক হাসান তপু: বর্তমানে প্রকাশনা শিল্প কিছুটা নাজুক অবস্থায় আছে। অর্থনৈতিক মুল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি নানবিধ কারনে মুদ্রণ সামগ্রী ও কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলস্বরূপ এই বছরের বইয়ের মুল্য গতবারের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। প্রকাশক হিসেবে আমাদেরকে নিজেদের কথা ভাবতে হচ্ছে একই সাথে পাঠকের উপর যেন দামের প্রভাব খুব বেশী না পড়ে সেই দিকেও লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে।
রিপোর্টার : সাহিত্য নিয়ে বা প্রকাশনা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
খান তবারক হাসান তপু: চেষ্টা করছি বাংলা সাহিত্যে যৎসামান্য অবদান রাখার জন্য। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের কাছ থেকে শিখছি, তাদের লেখা প্রকাশ করছি, একই সাথে নবীন লেখকদেরকে উৎসাহিত করছি। প্রবীন ও নবীন লেখকদের সম্মিলন ঘটিয়ে নবীনদেরকে আরো উৎকৃষ্ট লেখার সুযোগ করে দেয়া এবং অভিজ্ঞ লেখকেরাও নতুন বিষয় পেয়ে তাদের লেখার ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন।
রিপোর্টার : এবারের মেলায় পাঠক বা ক্রেতা সমাগম নিয়ে বলুন।
খান তবারক হাসান তপু: এবারের বইমেলা ২০২৩ এ প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। পরিবারেরও সন্তানদের নিয়ে মেলায় ঘুরছেন, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু তুলনামুলক ক্রেতার সংখ্যা কম। তবুও আমরা প্রকাশকেরা খুশি, মেলায় মানুষ আসছে।
রিপোর্টার : প্রকাশনা জগতের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
খান তবারক হাসান তপু: মুদ্রণ সামগ্রী ও কাগজের দাম প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বইয়ের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদি এখনই মুদ্রণ সামগ্রী ও কাগজের দামের লাগাম টেনে ধরা না হয়, ভবিষ্যতে বই প্রকাশ করা ভীষন কস্টকর হবে।
রিপোর্টার :সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
খান তবারক হাসান তপু: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।