গাজীপুরে ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনায়, ওসিসহ ৩ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সুপারিশ

মেহেদী হাসান শাহীন, স্টাফ রিপোর্টার:

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার শাহনাজ গলির বাসিন্দা সূতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে গত ১৪ জানুয়ারি রাতে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় বাসন থানা পুলিশ। পরে পরিবারের সদস্যদের পুলিশ জানায়, ১৭ জানুয়ারি রাতে থানা থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় রবিউল মারা গেছেন।

এ মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)কে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারী) নিজ কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। বরখাস্তের সুপারিশ করা এই তিন কর্মকর্তা হলেন বাসন থানার সাবেক ওসি মালেক খসরু খান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান ও এএসআই নুরুল ইসলাম।

প্রসঙ্গগত, জিএমপি’র বাসন থানা পুলিশের নির্যাতনে সূতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যুর খবর এলাকায় প্রচার হলে ১৮ জানুয়ারি সকালে স্থানীয়রা ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে, পুলিশের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়।
এ ব্যাপারে দুইটি মামলা হয়েছে এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেলায়ার হোসেন, উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার খায়রুল ইসলাম।

সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিজ কার্যালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ঘটনার পরপরই বাসন থানার দুই এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ওসি মালেক খসরু খানকে ঘটনার কিছুদিন পর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
“তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে বরখাস্তের সুপারিশ করে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।”

তদন্ত কমিটির বরাতে কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ‘নিহতের চারদিন আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে কিছুটা সত্যতা’ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, “আমরা নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্য সহ তার বাসার আশপাশের মানুষজন এবং এর সঙ্গে যুক্ত-অযুক্ত ৮৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেছেন রবিউলকে পুলিশ তার মৃত্যুর চারদিন আগেই গ্রেপ্তার করেছিল।”
চারদিন আগেই রবিউল ইসলামকে ডেকে নেওয়া, রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া, ছেড়ে দেওয়ার সময় তাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি পৌঁছে না দেওয়া, থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়াসহ প্রভৃতি বিষয় মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে বলে তিনি জানান।
বাসন থানায় সিসিটিভির মনিটরিং ছিল এবং ঘটনার কয়েকদিন আগে কেন সিসিটিভি অকার্যকর ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
“সিসিটিভি ক্যামেরা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য জিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে কে বা কারা ক্যামেরা বন্ধ বা ক্ষতিসাধন করছে অথবা বন্ধ করে রাখছে তা ধরা পড়বে।”

তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় হাতে পেয়েছে তারই আলোকে বাসন থানার সাবেক ওসি মালেক খসরুর ব্যাপারে মহাপুলিশ পরিদর্শককে (আইজিপি) সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, অধিক মেয়াদে তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু বিষয় তদন্তে বেরিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া রবিউলকে জুয়া খেলার যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সে অভিযোগটি সঠিক ছিল কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
“আমরা ঘটনা প্রসিডিংয়ের জন্য একটা সুপারিশমালা তৈরি করেছি, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।”

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ