বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গতকাল রবিবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিইআরসির কারিগরি কমিটি মূল্যবৃদ্ধির এই সুপারিশ করে। শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামানসহ বিতরণ-সঞ্চালন কম্পানি এবং ভোক্তা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। একই মাসে গ্রাহক পর্যায়ে ২০ থেকে ২৩ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী কম্পানি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই চাপে আছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে অযৌক্তিক ও জনস্বার্থবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম। গণশুনানিতে তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়লে তা ২০২৩ সালের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। জনগণের কষ্ট বাড়বে। তিনি বিদ্যুৎ খাতের সিস্টেম লস ও অনিয়ম বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর অভিযোগ, বিতরণ কম্পানিগুলো ইচ্ছামতো মুনাফা করতে দাম বাড়াতে চাচ্ছে।
গণশুনানিতে বিতরণ কম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দাম না বাড়লে চলতি অর্থবছরেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান হবে ২৩৪ কোটি টাকা। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) লোকসান হবে এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির (ডিপিডিসি) লোকসান হবে এক হাজার ৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানির (ডেসকো) লোকসান হবে এক হাজার ৪০২ কোটি টাকা এবং নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানির (নেসকো) ৫৩৫ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানানো হয়। তবে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি (ওজোপাডিকো) আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না করলেও বলেছেন, দাম না বাড়লে তাদেরও ক্ষতি হবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ‘মেট্রো রেল পরিচালনার জন্য বিদ্যুতের দামে কিছুটা ছাড় চেয়েছি। আমরা যত ছাড় পাব, ততই মেট্রো রেল চলাচলের জন্য মঙ্গল।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছিল ১০৩.৭৭ শতাংশ। গ্রাহক পর্যায়ে সবশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সে সময় বাড়ানো হয় ৫.৭৭ শতাংশ।