আর্জেন্টিনা ৩ (৪): ৩ (২) ফ্রান্স
এটাই কি বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা ফাইনাল? হয়তো। এটাই কি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ম্যাচ? হয়তো।
এ যেন নিয়তিরই লিখন! লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ যাবে, কিন্তু সেটা যেনতেনভাবে নয়। নাটকের পর নাটক, স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে সম্ভবত বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তিটা হবে মেসির হাতে ট্রফি ওঠার মধ্য দিয়ে। যে ট্রফি দিয়ে ফুরিয়েছে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্বজয়ের অপেক্ষা। কে জানে হয়তো এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে সর্বকালের সেরা ফুটবলার নিয়ে বিতর্কও। যে অধরা ট্রফিটা ছিল না বলে মেসিকে সেরা মানতে রাজি ছিলেন না অনেকে, কাল সেই ট্রফিটাও মেসির হয়ে গেল।


অথচ প্রথম এক ঘণ্টা শেষে কে ভেবেছিল এই ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে যাবে! কে ভেবেছিল টাইব্রেকারে যেতে হবে এই ফাইনালের ফল পেতে। তখন পর্যন্ত ম্যাচে তো ফ্রান্স বলতে গেলে নেই-ই বলা যায়। শুধু ২ গোল খেয়ে পিছিয়েই নয়, মনে হচ্ছে ওরা খেলছেই না। ফাইনাল একটা দলের মধ্যেই হচ্ছে। এটাই কি বিশ্বকাপের সবচেয়ে একতরফা ম্যাচ হতে যাচ্ছে কি না, সেই আলোচনাও ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে।
কাঁদলেন মেসিও। এমন একটা দিনের অপেক্ষাতেই তো ছিলেন তিনি সেই ২০০৬ বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু বিশ্বকাপ তাঁকে বারবার হতাশ করে ফিরিয়েছে। আট বছর আগে মারাকানায় খুব কাছে গিয়েও ফাইনালে হারতে হয়েছিল জার্মানির অতিরিক্ত সময়ে দেওয়া গোলে। কিন্তু কাল রাতে আর মেসি খালি হাতে ফিরে যেতে রাজি ছিলেন না। আর মেসি যদি রাজি না থাকেন, তাঁকে ফেরানোর সাধ্য কার!

এই ম্যাচে দি মারিয়ার গল্প যে তখনো শেষ হয়নি। ৩৬ মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটি যে এল তাঁর পা থেকেই। ফরাসি রক্ষণ ফাঁকা পেয়ে ডান প্রান্তে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে পাস বাড়ান মেসি। ম্যাক অ্যালিস্টার বাঁ প্রান্তে বল বাড়ান আরও ভালো অবস্থানে থাকা দি মারিয়াকে। ফ্রান্সের গোলকিপার লরিস দি মারিয়াকে আটকাতে এগিয়ে গেলেও ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে বল জালে চালান করেন দি মারিয়া।
কিন্তু ফুটবল ম্যাচ কত দ্রুত রং বদলাতে পারে, সেটা দেখাতেই যেন লুসাইল তৈরি হয়ে ছিল কাল। দেশমের বদলি কাজে দিল আলাদিনের চেরাগের মতো। বিরতির আগেই নামিয়েছিলেন রান্দাল কোলো মুয়ানিকে, ৭১ মিনিটে নামেন এদুয়ার্দ কামাভিঙ্গা। ৮০ মিনিটে কোলো মুয়ানিকে ঠেকাতে গিয়েই ডি-বক্সে ফাউল করে পেনাল্টি দেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দি। স্পট কিক থেকে গোল করে ব্যবধান কমান কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিন্তু আসল কাজটা করেন পরের মিনিটেই। মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে এমবাপ্পেকে পাস বাড়িয়েছিলেন কিংসলে কোমান। মার্কাস থুরামের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে এমবাপ্পে নিলেন অসাধারণ এক শট। ২-২। ওই গোলে শুধু মেসিকে ছাড়িয়ে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়েই এগিয়ে গেলেন না এমবাপ্পে, ফ্রান্সকে একেবারে চাঙা করে তুললেন। তখন কে জানত, মেসি পিছিয়ে পড়ে থাকবেন না।