বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশ আটক করেছে বলে দলের একজন নেতা জানিয়েছেন।
বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা দলের শীর্ষস্থানীয় এই দুই নেতাকে তাঁদের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে গেছেন।
কাছাকাছি সময় ঢাকার শাহজাহানপুরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা মির্জা আব্বাসকে আটক করে নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে এত রাতে পুলিশের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই সমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে বিতর্ক-আলোচনার মধ্যে বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামে বিএনপির এক কর্মী নিহত হন, আহত হন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির চার শতাধিক নেতা-কর্মীকে।
এ পরিস্থিতিতে সন্ধ্যার পর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠক করতে যান। দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের বৈঠক শেষে বের হয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা (বুলু) সাংবাদিকদের বলেন, গণসমাবেশের জন্য কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পরে এ বিষয়ে বরকতউল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় আড়াই ঘণ্টার আলোচনার পর আমরা কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ—এ দুটি জায়গা নিয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি। এখন যেটা পছন্দ হয়, আমরা সেটার কথা তাদের জানিয়ে দেব। এ ক্ষেত্রে কমলাপুর স্টেডিয়াম আমাদের প্রথম পছন্দ।’
আলোচনায় ডিএমপি কমিশনার গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার আশ্বাস দেন বলেও জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতা বরকতউল্লা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের বিষয়ে কথা হয়েছে। দুজনের আজ জামিন হয়েছে। আর উনারা বলেছে, আপনাদের উকিলেরা দাঁড়ালে রোববারের মধ্যে সব নেতাদের জামিন হয়ে যাবে। বলেছে, “আমরা কারও রিমান্ড চাইব না। কারও ব্যাপারে প্রসিকিউশন প্রতিবাদ করবে না।”’
বিএনপির এ নেতা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে এই আশ্বাস বাণী শুনে আসার কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির জ্যেষ্ঠ দুই নেতাকে আটক করার খবর এল।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়ভীতি দেখানোর খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইসও ওয়াশিংটনে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘটনা নিয়ে তাঁর দেশ উদ্বিগ্ন।
সভা-সমাবেশের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট ভউলও বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক টুইটে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঘটনাগুলোর ওপর বিশেষ নজর রাখছেন। বিশেষ করে এ বছরের জুলাই মাস থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা এবং মৃত্যু ঘটানোর মতো প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের উদ্বেগজনক খবর আসার পর থেকে তিনি বাংলাদেশের ঘটনাবলি অনুসরণ করছেন।
জাতিসংঘের এই বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টুইটে আরও বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।