বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, ১০ দিনে ১৮ জনের মৃত্যু

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত জুন মাসে এটিই ছিল করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু। জুন মাসে প্রথম ১৯ দিন এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

২০ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মৃত্যু হয় ১৮ জনের। এই ১৮ জনের মধ্যে বয়সের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের বেশি মৃত্যু হয়েছে। করোনার টিকার দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ নিয়েছেন—এমন ব্যক্তিরাও রয়েছেন মৃত্যুর তালিকায়। তবে রোগ বিশেষজ্ঞদের পক্ষে বলা হচ্ছে, করোনা টিকা নেওয়ার পরও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ—এসব সমস্যা যাদের রয়েছে তারা ঝুঁকিমুক্ত নয়। সাধারণভাবে করোনা টিকা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা গত চার দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। আগের চার দিন প্রতিদিনই দুই হাজার জনের বেশি শনাক্ত হয়। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৮৯৭ জন। শনাক্তের হার ১৫.৩১ শতাংশ। সর্বশেষ মৃত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী। ৪১ থেকে ৫০ বছরের একজন; ৫১ থেকে ৬০ বছরের তিনজন ও ৮১ থেকে ৯০ বছরের একজন আছেন। মৃত পাঁচজনই ঢাকা বিভাগের। এ ছাড়া নতুন শনাক্তদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগের এক হাজার ৫৫৪ জন। বাকিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৪ জন, বরিশালে ৭১ জন, খুলনায় ৪৩ জন, রাজশাহীতে ৪২ জন, ময়মনসিংহে ২০ জন, রংপুর ১১ জন ও সিলেটে ১২ জন।

মৃত্যু বেশি ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে : জুন মাসের ২০ তারিখ থেকে প্রায় প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জুনের শেষ ১০ দিনেই মারা গেছেন মোট ১৮ জন। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন একজন করে চারজনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৪ জুন কেউ মারা না গেলেও ২৫ জুন তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়। পরে ২৬ ও ২৭ জুন দুজন করে চারজনের, ২৮ জুন তিনজন, ৩০ জুন চারজন এবং গতকাল পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।

জুন মাসের শেষ ১০ দিনে যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে আট জন নারী ও ১০ জন পুরুষ। বয়স বিবেচনায় তাঁদের মধ্যে ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের চারজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের তিনজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের একজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের একজন ও ৯১ থেকে ১০০ বছরের একজন। এ হিসাবে ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ রোগী।

টিকা নেওয়ার পরও মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ২০ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের করোনা টিকা নেওয়া সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে জানা যায়, মৃত ওই ৯ জনের মধ্যে করোনার টিকা নিয়েছিলেন সাতজন। তিনজন দুই ডোজ ও চারজন তিন ডোজ বা বুস্টার ডোজও নিয়েছিলেন। অন্য দুজন টিকা নেননি। অধিদপ্তর থেকে ২৭ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মৃত ৯ জনের টিকা নেওয়া সংক্রান্ত গতকাল পর্যন্ত প্রকাশ করেনি।

বিশেষজ্ঞ মত : সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘এখন যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় তিন সপ্তাহ আগে। সে সময় করোনার রোগী শনাক্তের সংখ্যা অনেক কম ছিল; কিন্তু এখন শনাক্তের সংখ্যা ওই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। সে কারণে আমার আশঙ্কা, জুলাইয়ের শেষার্ধ্বে আমরা হয়তো আরো বেশি মৃত্যুর খবর পাব। ’

টিকা নেওয়ার পরও মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, টিকা অবশ্যই করোনায় গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে অনেককে রক্ষা করছে। তবে যাদের, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগ জটিলতা আছে তারা টিকা নিলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ ধরনের লোকজনকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

সূত্র: কালেরকন্ঠ

সর্বশেষ