বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পারফরমেন্স সন্তোষজনক নয় : ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পারফরমেন্স সন্তোষজনক নয় : ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা

 

 

ঢাকা ২২ জানুয়ারি ২০২২ :

 

নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রস্তাবিত খসড়া আইনে মনে হচ্ছে অনেক অপূর্ণতা রয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে মনেহয় এটি শুধু সার্চ কমিটি গঠনের জন্য।

সত্যিকার অর্থে বর্তমান সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব নেই, তাই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া আইনটি চুড়ান্ত করা উচিত। সর্বপোরি এই আইনটি যাতে জনগনের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

একটি ভালো আইনের জন্য প্রয়োজনে সময় নেয়া যেতে পারে। তাড়াহুরা করে ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রণয়ন কারো জন্যই কল্যাণকর হবেনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযগ্যোতা সুষ্পষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে।

যাদের সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে বিবেচনায় না নেয়া উচিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা কোন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে তাদের আইনানুগ বিচার হওয়া উচিত। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়, তাই কোন বিশেষ পদধারী ব্যাক্তির অপরাধের বিচারের জন্য ইনডেমনিটি থাকা উচিত নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সদিচ্ছা থাকলে ভালো নির্বাচন করতে পারতো।

তাদের পারফর্মেন্স সন্তোষজনক নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সুখকর না হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আজ (২২ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এফডিসিতে ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভূক্তির জন্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ এবং ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদার নাম প্রস্তাব করেন।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরো বলেন, নির্বচন কমিশন, বিচার ব্যবস্থা, প্রসাশন ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলসমূহের আস্থার অভাব রয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ কে জনবান্ধব ও সুশাসনের সহায়ক করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ৬ দফা সুপারিশ প্রদান করেন-

১। ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে সংসদে সরকারী দল, বিরোধী দল ও সংসদ সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে তৃতীয় প্রতিনিধিত্বকারী দলের ১ জন করে সংসদ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা।

২। নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে সম্পৃক্ত সুশীল সমাজের ব্যাক্তিবর্গ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে ইসি গঠনে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা।

৩। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিরুপণের মেকানিজম আইনের অন্তর্ভূক্ত রাখা। যাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান সমুন্নত রাখার মতো সৎসাহস ও দৃঢ়তাসম্পন্ন ব্যাক্তিরা নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভূক্ত হন।

৪। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সার্চ কমিটি যেসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে, সেসব নাম ও তাদের জীবনবৃত্তান্ত ওবেসাইটে প্রকাশ করা। যাতে তাদের সম্পর্কে গুরুতর কোন অভিযোগ থাকলে তা নাগরিকরা জানাতে পারে।

৫। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা আর্থিক অনিয়ম, অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ততা এবং পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করলে কি ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে নির্বাচন কমিশন আইনে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা উল্লেখ করা।

৬। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অনিয়ম বা অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে কোন রকম বিশেষ শিথিলতা বা ইনডেমনিটির বিধান না রাখা।

নির্বাচনকালে গ্রেফতার, মামলা, কালো টাকার ব্যবহার, পেশিশক্তি, ভিন্নমতের মানুষদের ওপর চাপ সৃষ্টি, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তা বন্ধ করতে হবে। বর্তমান কে এম নুরুল হুদা কমিশন আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভালো নির্বাচন করতে পারতো। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাই ভালো নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের দাবী জোরালো হচ্ছে।

নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হচ্ছে জনগণ, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী। নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থা না থাকলে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখোমুখী হয়। তাই আগামী নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলসমূহের মতামতকে বিবেচনায় নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসি নিয়োগের খসড়া আইনটির অনুলিপি কোথায় আছে এখনো কেউ বলতে পারছে না।

যা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। অংশীজন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের যাচাই বাছাই ও মতামত ছাড়া আইনটি পাস হলে এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ দূর করতে হবে। তাহলে অংশগ্রহনমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম হবে। তা না হলে দেশে আবারো রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। যা মোটেই কাম্য নয়।

ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা আরো বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন খুবই জরুরী। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে গত ৫০ বছরে দেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য কোন আইন তৈরি হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে সুশাসন ব্যাহত হয়। দুর্নীতির কারনে সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তির ঘটনা খুবই কম। অথচ পাকিস্তান আমলেও সিভিল সার্ভিসে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি হতো।

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনলোজির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক আরাফাত আলী সিদ্দিক ও সাংবাদিক আতিকা রহমান।

সর্বশেষ