উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান আইএমইডি সচিবের
ঢাকা ৯ জানুয়ারি ২০২২ :
“প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কথায় ও কাজে যদি মিল ও সততা থাকে তাহলে জনগনও উন্নয়নকার্যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবে।”-বলেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।
আজ বগুড়া জেলায় সরকারি ক্রয় চুক্তি বাস্তবায়নে নাগরিক সম্পৃক্ততা বিষয়ক এক ভার্চুয়াল কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে আমি অনুরোধ করব, তাঁরা যেন নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং তাদের ওরিয়েন্টেশানে উপস্থিত থাকেন।” তিনি জানান, “নারীরা যেন এই উদ্যোগে বেশি করে সম্পৃক্ত হন, সে ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে।
সবার সম্মিলিত প্রয়াসে সিটিজেন এনগেজমেন্ট একটি মহীরূহ হিসেবে বেড়ে উঠবে।” নাগরিক, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, ঠিকাদারসহ সকল অংশীজনদের একই ছাতার নিচে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণের জন্য জনগণের টাকায় বিপুল পরিমাণ অর্থ কেনাকাটার জন্য ব্যয় হয়। তাই জনগণের জানার অধিকার রয়েছে কিভাবে তাদের টাকা, কোথায় ও কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে।”
বক্তারা বলেন, সরকারি ক্রয় চুক্তি বাস্তবায়নে নাগরিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে সরকার যে কৌশল প্রণয়ন করবে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কারো একার নয়, সবারই। সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ও পূর্নতা আনার চিন্তা থেকেই উপজেলাগুলোতে কাজের সাইটে আশেপাশের লোকজনদের নিয়ে একটি নাগরিক পর্যবেক্ষণ দল তৈরি করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ওই কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা এবং কোনো অনিয়ম দেখলে স্থানীয় দায়িত্ত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে জানানো। এই দলটি “নাগরিক পর্যবেক্ষক দল” নামে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ), “Digitizing Implementation Monitoring and Public Procurement Project (DIMAPPP)” এর আওতায় দেশের ৪৮টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে সরকারি ক্রয় কার্যের বাস্তবায়নে স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কাজ করছে। আর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ্ গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এ কাজের জন্য সিপিটিইউ’র পরামর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।
DIMAPPP প্রকল্পের আওতায় প্রথম বছরে ১৬টি এবং দ্বিতীয় বছর থেকে আরও ৩২টি উপজেলাসহ মোট ৪৮টি উপজেলায় নাগরিকদের মাধ্যমে এই চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ চালু করা হয়েছে। ব্র্যাক এর কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রটেকশান (সেলপ) এই কাজে মাঠ পর্যায়ে বিআইজিডিকে সহযোগীতা করছে।
এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা মাঠ পর্যায়ে তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণের মতামত নেন।
সিপিটিইউ’র পরিচালক মোঃ আজিজ তাহের খান তাঁর সূচনা বক্তব্যে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আজকের কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিভাবে সরকারি ক্রয় চুক্তি বাস্তবায়নে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা। আজকে আপনাদের কাছ থেকেও শোনা হবে এ ব্যাপারে আপনাদের ধারণা কি।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ জিয়াউল হক বলেন, “নাগরিক মনিটরিং গ্রুপে যাদের সদস্য হিসেবে নেয়া হয়, তাদের যাচাই-বাছাই ঠিকমত করে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে “সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নাগরিক সম্পৃক্ততা ও কর্মশালার পরিপ্রেক্ষিত” শীর্ষক একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন জনাব সৈয়দা সেলিনা আজিজ, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার, বিআইজিডি।
সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি, সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)-এর মহাপরিচালক জনাব মোঃ শোহেলের রহমান চৌধুরী উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর কর্মপদ্ধতির আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, “সরকারের উদ্দেশ্য হল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। আর সেই উদ্দেশ্যে নাগরিকদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তার একটি মডেল ডেভলপ করা হচ্ছে। আমরা এমনভাবে নাগরিক দল তৈরি করি যাতে কোন স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি না হয়। এরফলে আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, বিগত দিনের চেয়ে এখন আমরা সকলের কাছে থেকেই অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সিপিটিইউ’র সিনিয়র কম্যুনিকেশান কনসালটেন্ট শফিউল আলম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রোটেকশানের (সেলপ- SELP) প্রোগ্রাম ম্যানেজার জনাব রবিউল ইসলাম। এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্থানীয় দরদাতা ও জিটিএফ প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং নাগরিক পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।