আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে, দেশে এখনই না

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে, দেশে এখনই না

বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়ানো হয় বাসভাড়া। ডিজেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। কিন্তু এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু জ্বালানি বিভাগ বলছে, দেশের বাজারে তেলের দাম এখনই কমছে না। কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি পাঁচ ডলারের মতো কমেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ৮৫ ডলারে বিক্রি হলেও এখন তা কমে ৮০ ডলারের নিচে নেমেছে।

গত শুক্রবার রয়টার্স ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সংরক্ষিত জ্বালানি তেল বাজারে ছাড়ায় বিশ্ববাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।

২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে তেলের দাম বেড়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও দাম কমানো হবে।

গতকাল শনিবার জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়টি বিপিসি আমাদের জানালে অবশ্যই আমরা দাম কমাব। এখন পর্যন্ত বিপিসি আমাদের কিছু জানায়নি।’

তেলের দাম বাড়ানোর সময় বিপিসিও বলেছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে দেশের বাজারেও কমানো হবে। গতকাল জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহেদী হাসান

কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের হিসাবে এখনো জ্বালানি তেলের দাম কমেনি। কারণ আমাদের তেল আসে সিঙ্গাপুর থেকে। সিঙ্গাপুরে এখনো ব্যারেলপ্রতি দাম ৮৯ ডলার।’

মেহেদী হাসান বলেন, ‘যেহেতু সিঙ্গাপুরে দাম কমেনি, তাই দেশের বাজারে কমানোর প্রশ্নই আসে না। তবে বিশ্ববাজারে ব্যাপকভাবে কমলে আমরাও কমাব।’

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার চিত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪৯ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ ডলার। মার্চে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৬০ ডলার এবং এপ্রিলে ৬৫ ডলার বাড়লেও মে মাসে অবশ্য এক ডলার কমে ৬৪ ডলার বিক্রি হয়। কিন্তু জুলাইয়ে একলাফে ৭৩ ডলারে পৌঁছায়। আগস্টে ব্যারেলপ্রতি ৭৪ ডলার এবং অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২৭ অক্টোবর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫.৭ ডলার। অবশ্য নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম ৮২.৫ ডলারে নেমে আসে। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল ৮০ ডলারের নিচে নেমে যায়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে এভাবে কমতে থাকলে হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারে নেমে আসবে। এ জন্য দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে আরো ধৈর্যশীল হওয়া উচিত ছিল। কারণ তেলের দাম সব সময় ওঠানামা করেই।’

ম তামিম বলেন, ‘সামনে যদি জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে থাকে, তখন একটা চাপ সৃষ্টি হবে দাম কমানোর। তখন ডিজেলের দাম কমানো হলেই কি পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পরিবহনের ভাড়া আগের পর্যায়ে যাবে? দাম কমানোর সুবিধা যদি সাধারণ মানুষ না পায়, তাহলে কাদের জন্য কমাবে? দাম কমানো হলেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পায় না।

সুত্র: কালেরকন্ঠ

সর্বশেষ