ঢাকা ফেনী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নানা অনিয়ম

ঢাকা ফেনী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নানা অনিয়ম

ঢাকা ফেনী সমিতির নির্বাচন ঘিরে নানা অনিয়ম

ঢাকা ১৩ নভেম্বর ২০২১ :

 

ঢাকায় বসবাস করা ফেনীবাসীদের সংগঠন ‘ফেনী সমিতি, ঢাকা’র কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বেচ্ছাচারিতা, পক্ষপাত, অনিয়ম ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ উঠেছে। সমিতির সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি নিজেদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ গঠনতন্ত্র পরিপন্থি নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে সমিতির নেতৃত্ব পুন:দখলের পায়তারা করছেন।
অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ কমিটির অধীনে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচনের পুন:তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকায় বসবাসরত ফেনীবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফেনী সমিতি, ঢাকা’।
পরবর্তীতে গঠনতন্ত্র প্রণয়ণের মাধ্যমে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত ও সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত কমিটির মাধ্যমে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ঢাকায় বসবাস করা ফেনী জেলার সম্মানিত ও কৃতিব্যক্তিত্বরাই বিভিন্ন সময় সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মরহুম ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সচিব কফিল উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোশারফ হোসেন, বিশিষ্ট ব্যাংকার এম এ কাশেম, বরেণ্য সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এক্সিম ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম শাহজাহান কবির, ন্যাশনাল টাইপ রাইটারের এমডি মোস্তাফিজুর রহমান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন হুমায়ুন, বিশিষ্ট শিল্পপতি মোস্তাফিজুর রহমান দুলালসহ আরো বেশ কজন বরেণ্য ব্যক্তি।
তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র তোপখানা রোডে ভবন ক্রয়ের মাধ্যমে স্থাপন করা হয় সমিতির স্থায়ী কার্যালয়। আজীবন সদস্যের সংখ্যা প্রায় দুই হাজারে উন্নীত হয়। সমিতির ফান্ডে যুক্ত হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।

ফেনী সমিতি ঢাকার এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয় একটি স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতায়। সমিতির একাধিক সদস্য জানান, গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা ও নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে পেশিশক্তি প্রয়োগ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে ২০১৫-২০১৭ সালের নির্বাহী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সূচনা হয় কলঙ্কজনক অধ্যায়ের।

জবরদস্তিমূলক অনির্বাচিত ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বপন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ আবদুল্লাহ। ২০১৮ সালে সমিতির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আগের জবরদস্তিমূলক পন্থা অনুসরণে বহিরাগতদের দিয়ে অবৈধভাবে সমিতির অফিস দখল করে বিনানির্বাচনে সভাপতি হন শেখ আব্দুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সেলিম।

অনির্বাচিত এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সদস্যদের দাবির মুখে ঘোষিত হয়েছে ফেনী সমিতি ঢাকার ২০২১ সালের নির্বাহী কমিটি নির্বাচনের তফসিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ নভেম্বর (শনিবার) বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফেনী সমিতি ঢাকার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এ নির্বাচনে বর্তমান অনির্বাচিত কমিটি আব্দুল্লাহ-সেলিম পরিষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে গনি-বুলবুল পরিষদ। তবে নির্বাচন কতোটা পক্ষপাতমুক্ত নিরপেক্ষ হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সমিতির সদস্যদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংশয়। বর্তমান অনির্বাচিত কমিটির পুনরায় নেতৃত্ব দখলের নানা অপতৎপরতায় এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সমিতির বেশ কজন সদস্য।

ফেনী সমিতি ঢাকার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জড়িত এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় একজন সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রমে আমরা হতাশ। কারণ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে অনির্বাচিত সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ সাহেবের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে।
তারা কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সাধারণ সদস্যদের দাবির মুখে এ নির্বাচন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি একটি আজ্ঞাবহ প্রহসনের নির্বাচন হতে চলেছে বলে আমাদের অনেকেরই ধারনা।

ভোটার তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুরুতেই কোনো কারণ ছাড়াই ভোটার তালিকার ১১০০ সদস্য ফরম বাতিল বলে ঘোষণা করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন কমিটি।

কিন্তু বাতিল করার কারণ এবং বাতিলকৃত সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পরে ফেনীবাসীর অভিভাবক হিসেবে ফেনী সদর আসনের সম্মানিত সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানালে তার হস্তক্ষেপে ৪০০ সদস্যকে আপিলের সুযোগ দিলেও বিষয়টির চুড়ান্ত সুরাহা করা হয়নি। অন্যদের বিষয়েও কোনো পরিস্কার সিদ্ধান্তের কথা এখনো জানানো হয়নি।

ফেনী সমিতির ওই সিনিয়র সদস্য আরো জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর ভোটার করার শেষ তারিখ থাকলেও তারা অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বর্তমান কমিটির পছন্দের লোকদের ভোটার বানিয়েছেন ভোটার তালিকা প্রণয়ন কমিটি। ওইসব নতুন ভোটারের বেশিরভাগেরই ঠিকানা ও ফোন নম্বর ত্রুটিপূর্ণ।

নির্বাচন নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় জানিয়ে সমিতির আরেক সিনিয়র সদস্য বলেন, নির্বাচনী তফশীল ঘোষণার পর বর্তমান নির্বাহী কমিটির রুটিন কার্যক্রম ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বিধান না থাকলেও সমিতির অফিস সম্পূর্ণরূপে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বর্তমান কমিটি বিশেষ করে শাহাদাত হোসেন ভূইয়া সেলিম ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে রেখেছেন। উনার মোবাইলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে উনি যেখানেই থাকেন সেখান থেকে অফিস স্টাফ ও নির্বাচন কমিশনকে উনি এবং উনাদের চাহিদা অনুযায়ী পরিচালনা করছেন।

এ অবস্থায় অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ কমিটির অধীনে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নির্বাচনের পুন:তফসিল ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

ফেনী সমিতির আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোঃ মামুনুর রশিদ সাহেদ বলেন, ফেনীবাসীর একটি প্রাণের অরাজনৈতিক সংগঠন ফেনী সমিতি ঢাকা। এই প্রাণের সংগঠনে পেশীশক্তি ও রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করার কোনো মানে হয় না, গঠনতন্ত্র মেনে সমিতির নির্বাচন ও কমিটি গঠনসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। সবকিছুই সদস্যদের সামনে উন্মুক্ত রাখা উচিত। যেমন: আমি জানি না সমিমিতে সদস্যের গচ্ছিত আমানত বর্তমানে কতো এবং কোথায় গচ্ছিত আছে? সমিতির কার্যক্রমে পরিচ্ছন্নতা আনতে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।

নির্বাচনের অন্যতম  সভাপতি প্রার্থী আলহাজ্ব গনি আহামদ বলেন, ফেনী সমিতি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কাজেই এখানে রাজনৈতিক প্রভাব অবাঞ্ছনীয়। নির্বাচনে পেশীশক্তি বা রাজনীতিক প্রভাব প্রয়োগের বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।

এদিকে নির্বাচনী কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও নির্বাচনের সভাপতি প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রম গঠিত একটি নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সকল প্রার্থীর উচিত তাদের সহযোগিতা করা।

সর্বশেষ