জনপ্রতিনিধি-নীতি নির্ধারকদের তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে : ড. আকতার মাহমুদ

জনপ্রতিনিধি-নীতি নির্ধারকদের তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে : ড. আকতার মাহমুদ

জনপ্রতিনিধি-নীতি নির্ধারকদের তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে : ড. আকতার মাহমুদ

 

ঢাকা ০৮ নভেম্বর, ২০২১ :

ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, আঞ্চলিক, স্থানীয় পর্যায় সহ সকল পর্যায়ের ওয়ার্ডের জন্য গাইডলাইন প্রস্তুত, ওয়ার্ডসমূহের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা, জনপ্রতিনিধি ও নীতি নির্ধারকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়ার্ড কেন্দ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও নাগরিক পরিসেবা সুনিশ্চিত সহ ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রনয়নে পরিকল্পনাবিদদের অংশগ্রহণ সহ নানাবিধ মতামত উঠে আসে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত “ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনা” শীর্ষক ওয়েবিনারে।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী পরিকল্পিত ও টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০২১ উদযাপন করে যার প্রতিপাদ্য ছিলো “ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনা”।

দিবসটি উপলক্ষ্যে অদ্য ০৮ নভেম্বর ২০২১ (সোমবার), সকাল ১১.০০টায় অনলাইন প্লাটফর্মে “ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনা” শীর্ষক একটি ওয়েবিনার এর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এর সঞ্চালনায় ওয়েবিনার প্রতিপাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (চট্টগ্রাম শাখা)’র সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ এ. টি. এম. শাহজাহান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর শহর পরিকল্পনাবিদ জনাব বনি আহসান এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সী (UNHCR), কক্সবাজার এর ন্যাশনাল সেটেলমেন্ট প্ল্যানিং অফিসার মোঃ সুলতান মাহমুদ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন জনপ্রতিনিধি ও নীতি নির্ধারকদের তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনার স্তরবিন্যাস সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে পরিকল্পনাবিদদের কাজ করে যেতে হবে এবং পরিকল্পনা প্রনয়নে আঞ্চলিক, স্থানীক স্কেল কে বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর প্রয়াসে ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

একই সাথে পরিকল্পনার সুফল সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন সহ সকল স্তরের ওয়ার্ড কেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে এবং পরিকল্পনবিদদরা ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনা প্রনয়নে অগ্রসর ভূমিকা রাখবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ওয়ার্ড কেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রনয়ণ, ওয়ার্ডের পরিত্যক্ত জায়গাগুলোকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে পকেট খেলার মাঠ নিশ্চিতকরণ, পরিকল্পনার মাধ্যমে গণপরিসর স্বল্পতা দূরীকরণের জন্য মতামত দেন ডব্লিঊবিবি এর মোঃ মিথুন ও নাইমা আক্তার।

ওয়েবিনারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর শহর পরিকল্পনাবিদ মোঃ মঈনুল ইসলাম, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর শহর পরিকল্পনাবিদ মোঃ তানভীর রহমান মোল্লা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাশেম, সাভার পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ সহ ও বি.আই.পি.-র কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ এর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবির।

স্বাগত বক্তব্যে পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবির সাধারণ জনগণ এবং পরিকল্পনাবিদ দের মাঝে সম্পর্ক উন্নয়ন এর তাগিদ দেন। তিনি প্রতি বছর পৌরসভা দিবসটি পালনের আহ্বান জানান। শুধু অবকাঠামো গত পরিবর্তন নয় সামাজিক জীবনমানের উন্নয়ন এর কথাও তিনি বলেন এবং ওয়ার্ড লেভেলে উন্নয়ন না হলে যে আমরা সফলতা পাব না সেটাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (চট্টগ্রাম শাখা)’র সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ এ. টি. এম. শাহজাহান প্রতিপাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উক্ত প্রবন্ধে তিনি চট্টগ্রামের ফুটপাত সমস্যা, জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ও অনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনার কথা বলেছেন এবং সেগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেই সকল বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়াও সাধারণ জনগণের বোধগম্য হয় এমনভাবে যেন সকল পরিকল্পনা তৈরি করা হয় সেটির অনুরোধ জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর শহর পরিকল্পনাবিদ মোঃ মঈনুল ইসলাম ওয়ার্ড কেন্দ্রিক নগর পরিকল্পনাকে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন। তিনি ওয়ার্ড ভিত্তিক নানাবিধ সমস্যা এবং তথ্যভিত্তিক সমস্যা, জনসংখ্যা ভিত্তিক বরাদ্দজনিত সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। এছাড়াও তিনি কাউন্সিলর কমপ্লেক্স তৈরি সহ শিশুদের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা নিয়েও মন্তব্য করেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সী (UNHCR), কক্সবাজার এর ন্যাশনাল সেটেলমেন্ট প্ল্যানিং অফিসার মোঃ সুলতান মাহমুদ কক্সবাজারে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং সেখানে পরিকল্পনাকারীদের জন্য কাজের ক্ষেত্র কেমন সুযোগ রয়েছে সেসব নিয়ে আলোকপাত করেন। একই সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সামগ্রীক চিত্র তুলে ধরে বলেন কক্সবাজারে আরো বেশি পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ এর পরামর্শ প্রদান করেন।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর শহর পরিকল্পনাবিদ জনাব বনি আহসান রাজশাহীর ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন এবং রাজশাহীকে গ্রীন সিটি করার পেছনে তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ ও আলোকপাত করেন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর শহর পরিকল্পনাবিদ মোঃ তানভীর রহমান মোল্লা সিলেট এর সামগ্রীক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহ সিটি কর্পোরেশনের মহাপরিকল্পনার রুপরেখা তুলে ধরেন। এছাড়াও ওয়ার্ড ভিত্তিক বিদ্যমান নাগরিক সুযোগসুবিধাসহ নানাবিধ বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং ভবিষ্য কর্মপরিকল্পনা হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ওয়ার্ড ভিত্তিক গণপরিসর, খেলার মাঠ, খোলা জায়গা বৃদ্ধির কথাও বলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাশেম ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড গুলোয় নাগরিক সুযোগসুবিধাদি প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব। একই সাথে ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে জলপথ নেটওয়ার্ক কে সচল করতে হবে এবং গণপরিসরের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

ওয়ার্ডকেন্দ্রিক পরিকল্পনা শহরভিত্তিক মহাপরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক কিনা সে বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনাবিদ মশিউর রহমান। তিনি আরও বলেন কমিউনিটি কৌশলগত পরিকল্পনা কে বিবেচনায় রেখে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ণ করতে হবে।

পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন অন্তরভুক্তিমূলক শহর নিশ্চিত করতে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনকে উল্লেখ করতে হবে। একই সাথে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় নাগরিকদের সচেতনতা সহায়ক হবে বলেও মতামত দেন তিনি।

পরিকল্পনাবিদ এস এম মেহেদী আহসান বলেন ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক বা সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কেন্দ্রিক না হয়ে ইউনিয়ন পর্যায় পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে। একই সাথে ওয়ার্ড এর মধ্যে যে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং আঞ্চলিক, নগর স্কেল কে বিবেচনায় রেখে ওয়ার্ড কেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ণ সহ অর্থায়নের সময় স্থানীয় সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা সে বিষয় গুরুত্বসহকারে নিশ্চিতকরতে হবে।

সর্বশেষ