দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হ‌ওয়া উচিত : ড. আকতার মাহমুদ 

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হ‌ওয়া উচিত : ড. আকতার মাহমুদ 

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হ‌ওয়া উচিত : ড. আকতার মাহমুদ 

 

ঢাকা নভেম্বর ০৩ ২০২১ :

 

পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. মো মাহাবুবুল বারি এর সঞ্চালনায় এবং সভাপতিত্বে এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন  জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো মূলধারার প্রকল্প এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. পরিচালক (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী) ডেপুটেশন, এ. কে. এম. লুতফর রহমান, ডিটিসিএ এর সহকারি নগর পরিকল্পনাবিদ সাদিয়া চৌধুরী।

এই সেমিনারে  পরিকল্পনাবিদ খন্দকার এম আনসার হুসাইন A Faster Safer Cost-effective Sustainable National and Trans Boarder Road Connectivity Context: Bengal Delta শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও  দিলরুবা আফরোজ Impact of Covid-19 pandemic on Medical Purposed Travel Behaviors: A Case Study on Most Visited Hospitals in Dhaka City শীর্ষক এবং উম্মে নাবিলা সামান্তা Application of Electricity Generating Paving Slabs in Dhaka City: A Sustainable Pathway to Smart City শীর্ষক যথাক্রমে তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পরিচালক (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী) ডেপুটেশন, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেইনস্ট্রিমিং প্রজেক্ট (সিআরআইএমপি), এ. কে. এম. লুৎফুর রহমান “আমার গ্রাম-আমার শহর: উন্নত দেশের পথযাত্রা” শীর্ষক পল্লী অঞ্চলে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি, অধিকতর কর্মসংস্থান, উন্নত মানবসম্পদ ,তারুন্যের শক্তি, এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন।

এতে তিনি সকলের সহায়তা কাম্য করেন। এছাড়াও তিনি প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ, গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মকৌশল, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকৌশল, গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টার ও হাটবাজার উন্নয়ন, গ্রামীণ বিদ্যুৎ, পানি ও স্যানিটেশন  উন্নয়ন কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। একইসাথে শিক্ষা, কৃষি উৎপাদন ও যান্ত্রিকীকরন, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতির গুরুত্ব তুলে ধরেন।

পরিকল্পনাবিদ খোন্দকার এম আনসার হোসেন “A Faster Safer Cost-effective Sustainable National and Trans Boarder Road Connectivity Context: Bengal Delta” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং বঙ্গীয় ব-দ্বীপের প্লাবন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কথা বলেছেন এবং সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি এর সাথে যুক্ত মহাসড়ক সহ বাংলা ডেল্টা বা বঙ্গীয় ব-দ্বীপের বন্যার সমতল উপাদান সম্পর্কেও কথা বলেছেন। তিনি বঙ্গীয় ব-দ্বীপের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেন যেমন দেশের সাথে অনেকগুলো মহাসড়কের মাধ্যমেই বাংলা-ডেল্টা যুক্ত। এছাড়াও তিনি হাইওয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন। পাশাপাশি সামষ্টিক-অর্থনৈতিক পরিণতি নিয়েও আলোচনা করেন।

ডিটিসিএ এর সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ সাদিয়া চৌধুরী ঢাকার বর্তমান অবস্থা, টেকসই পরিবহনের ধারণা, চ্যালেঞ্জসমূহ এবং ভবিষ্যৎ এ উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার জন্য করণীয় কর্মসূচি  নিয়ে আলোচনা করেছেন। পরিকল্পনা করার আগে তিনি অর্থনৈতিক কার্যকারিতা, যথাযথ পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায্যতা প্রভৃতি বিবেচনায় রাখার কথাও বলেন। এছাড়াও তিনি টেকসই পরিবহন স্থাপন করতে পরিকল্পনা প্রক্রিয়াকে একীভূত করা, প্রযুক্তির উন্নতি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন, নগর গঠনের জন্য সঠিকভাবে ভূমি ব্যবহার প্রভৃতি বিবেচনা করতে বলেছেন । তিনি আরও বলেন, আরও পরিবেশগত এবং সামাজিকভাবে টেকসই মোডে স্থানান্তর করতে পারলেই দেশের অগ্রগতি সম্ভব।

প্রবন্ধক দিলরুবা আফরোজ তার উপস্থাপনায় কোভিড মহামারীর পূর্বে এবং সময়কালে চিকিৎসার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের ভ্রমণ পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে মানুষের ব্যাক্তিগত গাড়ি, উবার এবং পাঠাও এর উপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। মানুষ বর্তমানে বাস এবং রিকশার মত একাধিক বাহন ব্যবহারের পরিবর্তে একক যানবাহনে যাতায়াত করতে সুরক্ষিত অনুভব করেন। এতে করে সড়কে যানজট এবং অন্যান্য সমস্যা আরো বেড়েছে।

প্রবন্ধক উম্মে নাবিলা সামান্থা তার উপস্থাপনায় ঢাকা শহরে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রশমিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পাকা স্ল্যাব স্থাপনের মত একটি টেকসই পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ফুটপাতে ব্যবহার বিদ্যুৎ এর ঘাটতি প্রশমিত করার পাশাপাশি অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা ও কমিয়ে আনতে পারেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে পরিবহনসহ অন্যান্য সকল অবকাঠামো‌ উন্নয়নে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে টেকস‌ই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তঃসীমান্ত সংযোগ নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ সকলের মতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে মূলধন প্রণোদনা প্রকল্পের পরিবর্তে জনগণকেন্দ্রিক প্রকল্পের নিয়ে আমাদের অগ্রসর হ‌ওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর উদ্যোগে এবং জার্মান এজেন্সী ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জিআইজেড) বাংলাদেশ এর  সহযোগিতায় Planning for Inclusiveness and Sustainability in Post Pandemic Era (মহামারী পরবর্তী কালে অন্তর্ভূক্তিতা ও স্থায়িত্বশীলতার জন্য পরিকল্পনা) প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিগত ৩০ অক্টোবর ২০২১ তারিখ থেকে সপ্তাহব্যাপী চলমান নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন (আইকার্প) ২০২১ এর অষ্টম ভার্চুয়াল অধিবেশনঃ টেকসই পরিবহন এবং অবকাঠামো পরিকল্পনা অদ্য ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল জুম প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

সর্বশেষ