আরও ১০ মিলিয়ন মানুষকে সাহায্য করতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কর্মসূচি : ইফাদ
ঢাকা নভেম্বর ০২ ২০২১ :
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু–সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ তীব্রতর হচ্ছে এবং ঝুঁকিতে থাকা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক অবনতি থেকে রক্ষা করতে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই জলবায়ু সহনশীলতা এবং অভিযোজন ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, বলছে জাতিসংঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) থেকে আজ প্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদন।
“এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীলতা তৈরি”নামে এই প্রতিবেদনটি ইফাদের সহায়তায় এডাপটেশন ফর সমালহোল্ডার এগ্রিকালচারাল প্রোগ্র্যাম (এসাপ)- এর মূল ফলাফল এবং অর্জিত অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা পর্যালোচনা করে। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চলমান এসাপ কর্মসূচিটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অভিযোজন এবং প্রশমন করতে সুনির্দিষ্টলক্ষ্যে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে ৩০৫মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস, নেপাল এবং ভিয়েতনামে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ৫১০,০০০ –এরও বেশি ক্ষুদ্র কৃষি পরিবারকে সহায়তার মাধ্যমে কর্মসূচিটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
প্রতিবেদনটি গ্রামীণ জনগণের জীবন ও জীবিকার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ,অভিযোজন এবং প্রশমনে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সহায়তায় ইফাদের বহুমুখী, কার্যকরী এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলো তুলে ধরে।
এই প্রতিবেদনটি এই অঞ্চলে গৃহীত সফল কর্মপ্রক্রিয়া ও পন্থাসমূহ ও স্কেল-আপের সুযোগ পর্যালোচনা করে যা কিনা এসাপ কার্যক্রমের আরেকটি নতুন পর্যায়, “এনহ্যান্সড এডাপটেশন ফর সমালহোল্ডার এগ্রিকালচারাল প্রোগ্র্যাম” (এসাপ+) এর জন্য দৃঢ় একটি ভিত্তি স্থাপন করে । জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা ১০ মিলিয়ন মানুষের, বিশেষ করে নারী ও যুবকদের, জলবায়ু সহনশীলতাকে সহায়তা করার জন্য এসাপ + জলবায়ু অর্থায়নে সম্ভাব্যভাবে অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করছে।
“প্রায়শই ক্ষুদ্র উৎপাদকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষেত্রে সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কি করা দরকার তা জেনে থাকেন, আমরা তাদেরকে যথাযথ অর্থের যোগান ও প্রযুক্তিতে অভিগম্যতা দিয়ে সহায়তা করতে পারি, বলেন ইফাদের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ কিসা এমফালিলা।
“কৃষকরা সময়ের সাথে সাথে অনেক সফল অভিযোজন কৌশল তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনটি নিশ্চিত করে এবং এই স্থানীয় জ্ঞান ব্যবহার করার জন্য আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে” তিনি আরও বলেন।
আগামী ৩ নভেম্বর ২০২১, বুধবার বিকেল ৩: ০০ টায় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (COP26)-এ ইফাদ প্যাভিলিয়নে একটি লাইভ ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এই ভার্চুয়াল – ফিল্ড ট্রিপে বাংলাদেশের (রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত) ক্ষুদ্র কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পরিদর্শন করা হবে তথ্যচিত্র নির্মাতা কাসা আলমের সাথে দর্শকরা বাংলাদেশে ভার্চুয়াল ভ্রমণের মাধ্যমে ইফাদ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের জলবায়ু সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অভিযযোজন কৌশল নিয়ে আলোচনা করবেন।
প্রতিবেদনের মূল সুপারিশ গুলো হচ্ছে:
-
- দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে – জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং প্রভাবের দ্রুত মূল্যায়ন করতে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে, স্থানীয় জনগণের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে: ক্ষুদ্র কৃষকরা অনেক সফল অভিযোজন কৌশল তৈরি করেছে – এগুলিকে অবশ্যই চিহ্নিত, পরিমার্জিত, পরিচিত করতে হবে এবং দ্রুত ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন করতে হবে।
- স্থানীয় লোকেদের তৈরি করা সমাধানগুলিকে আরও উন্নত করতে এবং এদের গ্রহণকে দ্রুততর করতে পাবলিক–প্রাইভেট অংশীদারিত্ব ব্যবহার করতে হবে: প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এবং যন্ত্রপাতি যোগান, পরামর্শ পরিসেবা, প্রযুক্তি সমাধান, পণ্য বাজারজাত লাভজনক করে বাজার অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে পাবলিক সেক্টরের উদ্যোগগুলিকে বেসরকারী খাতের সাথে সমন্বিত করতে হবে।
- সফল অভিযোজন কৌশলগুলি গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গৃহীত হবে তখনই যখন বাধাগুলি অপসারণ করা হবে এবং অর্থায়ন পাওয়া যাবে: সহায়ক নীতি কাঠামো থাকলে এবং সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারী খাত পর্যাপ্ত অর্থ ও পরামর্শমূলক পরিষেবা প্রদান করলে ক্ষুদ্র কৃষকরা দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্ভাবন গ্রহণ করবে।
- জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগগুলিকে সহায়তা করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে যা কিনা মহামারী সহ অন্যান্য প্রতিকূল ঘটনা থেকেও রক্ষা করবে: উৎপাদক, সরবরাহকারী, ক্রেতা এবং অন্যান্য অংশীদারদের আদান–প্রদান সহজতর করতে এবং কোভিড–১৯ মহামারীর মতো বাহ্যিক অভিঘাতে কৃষক ও খাদ্য শৃঙ্খলের ঝুঁকি কমাতে প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলি সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলি খাদ্য ও কৃষি খাতে তরুণদের আকৃষ্ট করে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে উন্নত করে।