‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষি জমি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে : ড. আকতার মাহমুদ
ঢাকা নভেম্বর ০২ ২০২১ :
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, আমরা প্রতি বছরই কৃষি জমি হারাচ্ছি, এখন আমাদের মাথাপিছু জমির পরিমাণ ০.০৬ হেক্টর। বর্তমান সরকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে আমাদের উপজেলা এবং গ্রাম এলাকায় কৃষি জমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। একইসাথে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কৃষি জমি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর উদ্যোগে এবং জার্মান এজেন্সী ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জিআইজেড) বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় Planning for Inclusiveness and Sustainability in Post Pandemic Era (মহামারী পরবর্তী কালে অন্তর্ভূক্তিতা ও স্থায়িত্বশীলতার জন্য পরিকল্পনা) প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিগত ৩০ অক্টোবর ২০২১ তারিখ থেকে সপ্তাহব্যাপী চলমান নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন (আইকার্প) ২০২১ এর ষষ্ঠ ভার্চুয়াল অধিবেশনঃ সমন্বিত উন্নয়নের জন্য শহর ও অঞ্চলের টেকসই পরিকল্পনা ২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল জুম প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ এর সঞ্চালনায় এবং সভাপতিত্বে এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে জনাব সৈয়দ রেজওয়ানুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির পক্ষ থেকে জনাব মোঃ খালিদ হোসেইন ইয়াদ। এ অধিবেশনে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র নগর পরিকল্পনাবিদ আহমেদ আকতারুজ্জামান, কে এফ ডাব্লিউ এর সিনিয়র আরবান রেজিলিয়েন্স স্পেশালিস্ট পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদি আহসান। এছাড়াও অধিবেশনে প্রবন্ধক জাকারিয়া সেলিম Delineation of Flooded Areas using Remote Sensing Technology- A Case Study on Subarnarekha River Basin, Odisha, India এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহনা মেহেজাবিন হক 3R Approach for a sustainable Municipal Solid Waste Management System : A study of Ward no 1 DNCC শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ।
ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অ্যাসোসিয়েশন (এফএও) এর ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্ট এর ন্যাশনাল জিআইএস স্পেশালিস্ট জনাব সৈয়দ রেজওয়ানুল ইসলাম তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় খাদ্য পরিকল্পনার গুরুত্ব ও নগর পরিকল্পনার সাথে এর সম্পর্ক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শহুরে খাদ্য পরিকল্পনা সম্বন্ধে নগর পরিকল্পনাবিদরা খুব একটা সচেতন নয়, যদিও খাদ্য পরিকল্পনা নগরের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখে। এসময় তিনি বাংলাদেশে খাদ্য বিতরণ এবং শহরে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে FAO এর কিছু প্রকল্প সম্পর্কে ধারনা দেন। তিনি আরও বলেন, খাদ্য খাতের সমসাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য নগর পরিকল্পনাবিদরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে একটি সমন্বয়মূলক ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মোঃ খালিদ হোসেইন ইয়াদ বাংলাদেশে নগর উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে সাশ্রয়ী আবাসন সংকট, সহজলভ্য পরিবহন ব্যবস্থা এবং পরিবেশ দূষণ, বিশেষত বায়ুদূষণের কথা উল্লেখ করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর সমস্যা নিরসনের জন্য আমাদের এর আশপাশের শহরগুলোকে সুপরিকল্পিত গড়ে তুলতে হবে বলে উল্লেখ করে আগামী ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে আদর্শ নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়নের পক্ষে তিনি জোর দেন।
সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহনা মেহেজাবিন হক 3R Approach for a sustainable Municipal Solid Waste Management System : A study of Ward no 1 DNCC শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি থ্রি আর অ্যাপ্রোচের (3R Approach) মাধ্যমে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দ্বারা ঢাকাকে বর্জ্য শূন্য নগরীতে পরিণত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন। তিনি তার গবেষণায় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্য উৎস পৃথকীকরণ, ছাদ বাগান, সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য কাগজ ও কাপড় ব্যবহারের মত আরো কিছু কৌশল এর উপর আলোকপাত করেন।
পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদি আহসান নগর পরিকল্পনায় নির্মিত পরিবেশ গঠন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার উপর গুরাত্বারোপ করে বলেন আমাদের অতীত শিক্ষা ব্যবস্থায় কখনই নগর এলাকায় কৃষি জমিকে আলাদা কোন বিভাগে ভাগ করা হয় নাই। খাদ্য চাহিদাকে মাথায় রেখে আমাদের অবশ্যই কৃষিকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
একই সাথে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আমাদের কে অবশ্যই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত উন্নয়নের দিকে যেতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে এবং খাদ্য চাহিদা মিটাতে নির্মিত পরিবেশের মাঝে কৃষিকে এবং গ্রামীণ এলাকার সাথে নগরের যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতি একটি শক্তিশালী সংঘটন। উনারা মূলত বিকেন্দ্রীকরণ এবং একটি টেকসই উপায়ে গৌণ শহর উন্নয়নের দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। আপনারা আপনাদের আলোচ্যসূচি যদি নীতিনির্ধারকদের কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মতামত দেন।
নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আহমেদ আকতারুজ্জামান বলেন, আমরা পরিকল্পনা করি মানুষের জন্য। তাই পরিকল্পনা করা উচিত মানুষের প্রয়োজন এবং চাহিদা কে বিবেচনায় রেখে। এছাড়াও কাঠামো পরিকল্পনা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাসহ সকল পরিকল্পনায় অংশীজন নিশ্চিতকরার মাধ্যমে বিশেষ পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অধিবেশনটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।